কিডনি ভাল রাখতে যেসব খাবার খাবেন। কিডনি ভাল রাখার সহজ উপায়।

কিডনি ভাল রাখার উপায় এবং ভাল রাখতে যেসব খাবার খাওয়া উচিতঃ মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে একটি হল কিডনি। প্রতি বছরই কিডনির সমস্যার কারণে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। তাই কিডনি ভাল রাখার উপায় আমাদের জানতে হবে। সময় থাকতে আমরা যদি সতর্ক না হই তাহলে কখন আমাদের কিডনি বিকল হয়ে যায় বুঝতেই পারবোনা। 

যদি কোন কারণে বুঝতে পারেন যে আপনার কিডনি সমস্যা আছে তাহলে আর নিজের ইচ্ছা মত চলতে পারবেন না। আপনার যদি কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে আপনার চলাফেরা খাওয়া দাওয়া-দাওয়া এইসব এর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

কিডনি ভাল রাখতে যেসব খাবার খাবেন। কিডনি ভাল রাখার সহজ উপায়।

কিডনি ভালো রাখার জন্য কি কি খাওয়া উচিত। এবং কিডনি ভাল রাখার উপায়। 

একটা সুস্থ বা ভাল কিডনি আমাদের শরীরের বর্জ্য পদার্থগুলোকে ফিল্টার করে প্রস্রাবের সাথে বের করে দেয়  এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এমন হরমোনকে রিলিজ দেয়। এটি শরীরে থাকা তরলের সামঞ্জস্য করে এবং ভাল টা গ্রহন করে আর বর্জ্য পদার্থ গুলোকে প্রস্রাবে তৈরি করে।

অপরদিকে রোগাক্রান্ত কিডনি নিজ থেকে শরীরের বজ্র বা দূষিত পদার্থগুলোকে অপসারণ করতে পারে না। তাই কিডনিকে ভাল রাখতে হলে খাবার এর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। এবং কিডনি বান্ধব ডায়েট আপনাকে অনুসরণ করতে হবে যা আপনাকে আরও সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ কিডনি রোগের ১০টি লক্ষণ ও তার প্রতিকার

 কিডনি রোগের লক্ষণ 

কিডনি রোগের লক্ষণ অনেক রয়েছে। সব গুলো বিষয় আমরা অন্য একটি আর্টিক্যালে শেয়ার করবো। আজকে  মূল কয়েকটি লক্ষণ উল্লেখ করছি। 

  •  ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ।
  • ডায়াবেটিস কিংবা রক্তচাপ কিডনির যে কোন সমস্যা বা  রোগের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকির কারণ হয়ে থাকে । 
  • অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগার এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলে  কিডনিতে অতিরিক্ত প্রেসার পরে যার ফলে কিডনির  রক্তনালীগুলোর অনেক ক্ষতি হয়। এর ফলে আস্তে আস্তে কিডনির কাজ করার ক্ষমতা কমতে শুরু করে।
  •  কিডনি যখন ঠিকমতো কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং ঠিক মত কাজ করতে পারে না ঠিক তখনই রক্ত থেকে বর্জ্য (দূষিত) রক্ত তৈরি হয়, যা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে এবং আস্তে আস্তে কিডনি নষ্ট হয়ে যায়।
  •  তা ছাড়া আরো আছে যেমন, স্থূলতা বা অতিরিক্ত স্বাস্থ্য কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।  
  •  অতিরিক্ত ধূমপান, জেনেটিক্স, লিঙ্গ এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে ও কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। 

ডায়েট এবং কিডনি রোগের চিকিৎসা 

অনেকেই জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে, কিডনির সাথে ডায়েটের কি সম্পর্ক।আসল কথা হল আপনার যদি কিডনি রোগ হয় তাহলে ডাক্তার আপনার খাবার ক্ষেত্রে বিশেষ ডায়েটের কথা বলতে পারে। কারণ কিডনির সমস্যা হলে যা ইচ্ছা তা খাওয়া যায়না। 

কিডনি রোগের অবস্থার  উপর নির্ভর করে ডাক্তাররা  এ ধরনের রোগীর খাবারগুলো নির্ধারিত করে দেন । আপনার যদি কিডনির রোগ হয় তবে আপনি ভাল একজন কিডনির চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার ডায়েট বা খাবারের তালিকা নির্ধারণ করে নিতে পারেন। 

 কিডনি রোগে আক্রান্ত বা কিডনিতে কোন সমস্যা দেখা দিলে বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে কিডনি-বান্ধব খাবারের ডায়েট অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তখন যদি সঠিক খাবার আর চিকিৎসা পাওয়া যায় তাহলে এটি রক্তে বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এবং কিডনির বড় কোন ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

কিডনি ভাল রাখতে যে খাবার খাবেন না। 

কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিচে উল্লেখিত কিছু খাবার সম্পর্কে ডাক্তাররা নিষেধ দিয়ে থাকে। যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি এই খাবার গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারেন। 

সোডিয়াম: যদিও আমাদের শরীরে সোডিয়াম প্রয়োজন হয় তবে কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য অতিরিক্ত খাওয়া বিপদজনক হতে পারে। আমাদের দৈনন্দিন খাবার তালিকায় অনেক খাবারেই সোডিয়াম পাওয়া যায়। সোডিয়াম সব থেকে বেশি থাকে খাবার লবনে কেননা  table salt এর একটি প্রধান উপাদান হল সোডিয়াম ।

আরো পড়ুনঃ ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ১০টি প্রাকৃতিক উপায়

 আক্রান্ত কিডনি দূর্বল হওয়ায় অতিরিক্ত রক্তের মধ্যে থাকা সোডিয়াম ফিল্টার করতে পারে না, যার ফলে রক্তের স্তর বৃদ্ধি পায় এবং সমস্যা দেখা দেয় । তাই কিডনি আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রতিদিন ২০০০ মিলিগ্রামেরও কম সোডিয়াম গ্রহনের পরামর্শ দিয়ে থাকে ডাক্তাররা । সোডিয়াম বিভিন্ন খাবারে থাকে। এর মধ্যে কিছু খাবার হলঃ

  • চিপস
  • চিনাবাদাম
  • কাবাব
  • পেস্ট্রি
  • তাল
  • ডাল
  • কর্ন
  • আচার
  • মাশরুম
  • জলপাই ইত্যাদি।

পটাসিয়াম: পটাসিয়াম আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার সীমাবদ্ধ করতে হবে। সাধারণত ডাক্তাররা পটাসিয়ামকে ও প্রতিদিন ২০০০ মিলিগ্রামেরও কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। পটাসিয়াম বিদ্যমান অনেক খাবার রয়েছে। তার মধ্যে  কিছু খাবার হচ্ছেঃ

  • পালং শাক
  • ডাবের জল
  •  তরমুজ
  •  আলু
  •  ডালিম
  •  কমলালেবুর রস।

কিডনি ভালো রাখার উপায় কি?

কিডনি ভাল রাখার উপায় আমাদের জানা খুব প্রয়োজন। বিশেষ করে যাদের কিডনি রোগ রয়েছে তাদের জন্য। তবে এই ক্ষেত্রে সব থেকে ভাল হবে আপনার রোগের অবস্থা অনুযায়ী খাদ্য তালিকা নির্ধারণ করা। আর এর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আমাদের সকল গুরুত্বপূর্ণ আর্টিক্যাল গুলো আপনার নিউজ ফিডে পেতে গুগল নিউজে পাঁচমিশালী ফলো করুন।

 আজকে আমরা এমন ১০ টি খাবার সম্পর্কে জানবো যা আপনার কিডনি ভালো রাখতে ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকে। 

১. ফুলকপি

আমাদের দেশে সব জায়গায় ফুলকপি চাষ করা হয়।ফুলকপি একটি পুষ্টিকর সবজি যাতে অনেক ধরনের ভিটামিন রয়েছে যেমন, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, এবং বি ভিটামিন ফোলেটসহ আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির উপকরণ রয়েছে । 

এই সবজি আপনার কিডনি ভাল রাখতে সাহায্য করবে। এটি ইনডোলসের মতো অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগগুলিতেও পূর্ণ এবং এটি শরীরে ফাইবার জোগাতে ভাল কাজ করে। যদিও এটা শীতকালীন সবজি তবে অন্যান্য সময় ও সেই সবজি পাওয়া যায়। 

ফুলকপি শুধু কিডনি ভাল রখতে নয় পাশাপাশি আরো বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন বি এবং কোলিন উপাদান আপনার মস্তিষ্ক ভালো রাখতে অনেক সাহায্য করবে ।যদি গর্ভবতী মায়েরা নিয়ম করে ফুলকপি খেতে পারে তাহলে নবজাতক শিশুর মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ বিকাশ হতে সাহায্য করবে। 

২. ব্লুবেরি

ব্লুবেরি এই নামটা হয়তো সবার তেমন পরিচিত না ও হতে পারে। এটা একজাতীয় ফল। এটি অনেক রোগের কাজ করে। ব্লুবেরির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ, বি,  সি,  কে ও পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি ফল যা আপনি খেতে পারেন।

 বিশেষত, এই মিষ্টি ব্লুবেরি ফলে অ্যান্টোসায়ানিনস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা হৃদরোগ, কিডনি, নির্দিষ্ট ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিস নামক বড় বড় সমস্যা থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে।  কিডনি-বান্ধব ডায়েটের জন্য ব্লুবেরি ভাল কাজ করবে। 

আরো পড়ুনঃ চুল পড়ার কারণ কি ও তার আধুনিক চিকিৎসা ২০২৩

কারণ এগুলিতে সোডিয়াম, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম কম থাকে যা কিডনি বান্ধব ডায়েটের জন্য বেশ উপকারী। নিয়মিত ব্লুবেরি খাওয়ার ফলে পুরুষের স্বাস্থ্যের উপকার হয়। আপনি যখন নিয়মিত ব্লুবেরি খাবেন, আপনার তখন সর্দি,  কাশি হওয়ার সম্ভবনা সব থেকে কম থাকে । 

৩. লাল আঙ্গুর

লাল আঙ্গুর এটা অনেকেরই পছন্দের ফল হতে পারে। শুধুমাত্র খেতে সুস্বাদুই নয়, বরং প্রতিটি  ফল প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও ভিটামিন সরবরাহ করে। লাল আঙ্গুরে   প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে এবং এতে ফ্ল্যাভোনয়েড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের শরীরের চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হ্রাস করে।

কিডনি ভাল রাখতে লাল আঙ্গুর খেতে পারেন।লাল আঙ্গুরে রেসিভেরট্রোল অনেক বেশি থাকে এবং এতে এক ধরণের ফ্ল্যাভোনয়েড যা হৃদরোগের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ও অনেক ভাল কাজ করে।

 লাল আঙ্গুরে ভিটামিন এ, সি, বি৬, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ফসফরাস, ফলিত, ম্যাগনেসিয়াম এবং সেলেনিয়াম ইত্যাদি রয়েছে যা কিডনির যে কোন সমস্যা থেকে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করবে এবং আপনার স্বাস্থের জন্য খুবই উপকারি।

৪. ডিমের সাদা অংশ

কিডনি ভাল রাখতে ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন।আমরা জানি, ডিমের কুসুম খুব পুষ্টিকর হলেও এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস থাকে। তাই কিডনি ভালো রাখার জন্য কুসুম না খেয়ে  ডিমের সাদা অংশ খাওয়া যেতে পারে। ডিমের সাদা অংশ একটি উচ্চ মানের কিডনি-বান্ধব প্রোটিনের উৎস সরবরাহ করে থাকে যা কিডনির জন্য বেশ উপকারী ।

এছাড়াও কিডনি রোগের পাশাপাশি ডায়ালাইসিস চিকিৎসা করা লোকদের জন্য ডিমের সাদা অংশ দারুণ উপকারে আসতে পারে। যাদের শরীরে প্রোটিনের অভাব রয়েছে তাদের জন্য এটি অতি গ্রহণীয় একটি খাবার। ডিমের সাদা অংশে রয়েছে পটাসিয়াম, যা হৃৎযন্ত্রের যেকোনো সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিবে। এ ছাড়াও ডিমের সাদা অংশে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রখতে সাহায্য করে।

আপনার যদি হৃদরোগের সমস্যা থাকে তাহলে ডিমের কুসুম অবশ্যই পরিহার করতে হবে। কারণ ডিমের কুসুম রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় । যা পরবর্তীতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে ।

৫. রসুন

কিডনিজনিত সমস্যাযুক্ত লোকেদের ডায়েটে লবণসহ সোডিয়ামের পরিমাণ সীমিত করার পরামর্শ দেয় ডাক্তাররা । রসুনে অনেক পুষ্টি রয়েছে যা খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে দিয়ে লবণের একটি সুস্বাদু বিকল্প তৈরি করে।

রসুনে উৎস হিসেবে রয়েছে  ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি-৬  এবং এতে সালফার যৌগ রয়েছে যা প্রদাহবিরোধক বা বিভিন্ন ধরনের বিষ বেদনা থেকে মুক্তি দিতে পারে । শরীরে যখন অতিরিক্ত সালফারের ঘাটতি দেখা দেয় তখন রক্তচাপ আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করে। আর রসুনের মধ্যে থাকা বায়োঅ্যাকটিভ সালফার রক্তচাপ কমাতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে  করে।

প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে দুটি রসুনের কোয়া খেলে শরীরের রক্তে থাকা বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। যার ইতিবাচক প্রভাব কিডনিতেও পরে ফলে কিডনিতে থাকা বর্জ্য পদার্থ সাথে সাথে বেড়িয়ে যায় । পাশাপাশি বিশুদ্ধ রক্ত, ত্বককে সুন্দর করে এবং শরীরকে আরো চাঙ্গা করে।

আরো পড়ুনঃ আপেল সিডার ভিনেগার কি এবং এর দাম কত? 

৬. জলপাই তেল (Olive oil)

অলিভওয়েল বা জলপাই এর তেল সকলের পরিচিত এবং খুবই পুষ্টিকর তেল।এই জলপাই তেল চর্বি এবং ফসফরাসমুক্ত স্বাস্থ্যকর খাদ্যের যোগান দেয় । এটি কিডনি রোগে আক্রান্তদের জন্য এটি চমৎকার খাবার বলা যায় । কিডনি রোগে আক্রান্তদের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা খুবই প্রয়োজন। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রচুর সমস্যা হয়। জলপাইয়ের তেল বা Olive oil  এর  মতো স্বাস্থ্যকর ও উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবারগুলো এ সমস্যা সমাধান করে।

জলপাই তেলের বেশিরভাগ ফ্যাট হল অ্যালিক অ্যাসিড নামক এক মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট নামক বিভিন্ন উপাদান ।  এতে আরো অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি নামক বৈশিষ্ট্য রয়েছে।জলপাই তেলে থাকা মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট উচ্চ তাপমাত্রায় স্থিতিশীল থাকে, যা জলপাইয়ের তেলকে রান্নার জন্য স্বাস্থ্যকর তেলে রূপান্তর করে।

৭. বাঁধাকপি

কিডনি সমস্যা প্রতিরোধে বাধাকপি আপনার জন্য প্রয়োজনীয় একটি সবজি হতে পারে।কারণ বাঁধাকপিতে রয়েছে ভিটামিন ও খনিজে পরিপূর্ণ । এতে রয়েছে ভিটামিন-কে, ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-বি এর মত প্রয়োজনীয় ভিটামিন সমূহ ।

এই আঁশজাতীয় খাবারটি নিয়মিত খেলে আপনার অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক করে আপনার পাচনতন্ত্রকে সুস্থ ও সাভাবিক রাখে। যারা দীর্ঘদিন কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়ে ডায়ালাইসিস করিয়ে থাকেন, তাদের জন্য কাঁচা বাঁধাকপি খাওয়া খুবই উপকারি ।

বাঁধাকপি খেলে আরো বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে থাকা যায় যেমন, ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে। বাঁধাকপিতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীর থেকে ফ্রি রেডিকেল দূর করে শরীরকে যে কোন ধরনের ক্যান্সার হতে মুক্ত রাখে। এছাড়াও বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে। যাদের শরীরে আয়রন প্রয়োজন তারা তা খেতে পারেন। । কারণ খাদ্য তালিকায় পরিমাণমত আয়রন থাকতে হয় অন্যথায় শরীরে রক্তস্বল্পতা, ক্লান্তি ও মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যা হয়।

৮. পেঁয়াজ

পেঁয়াজ গন্ধযুক্ত খাবার হলে ও এতে বেশ উপকার রয়েছে। পেঁয়াজের মধ্যে ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ,  বি ভিটামিন এবং আরো বিভিন্ন রাসায়নিক উপকরণ রয়েছে । এতে আরো রয়েছে প্রাইবায়োটিক ফাইবার যা উপকারী অন্ত্র ব্যাকটিরিয়াকে খাওয়ানোর মাধ্যমে আপনার হজম সিস্টেমকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।

আরো পড়ুনঃ মুখের কালো দাগ দূর করার কার্যকরি  কিছু উপায়

এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ১৬২ মিলিগ্রাম পেঁয়াজ খেলে অতিরিক্ত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যা বিশেষ করে পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা থাকলে পেঁয়াজ প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে ভাল কাজ করে। ক্যানসারের মতো মরণ রোগকে দূরে রাখতে পেঁয়াজ খুবই উপকারী উপাদান। একধরনের ক্যানসার রয়েছে যাকে কোলন বলা হয়।সেই কোলন ক্যানসারের আশঙ্কা কমাতে বিশেষজ্ঞরা পেঁয়াজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।

৯. মূলা

মূলা শীতকালীন সবজি যা শীত কালে পাওয়া যায় যা  রেনাল ডায়েটের জন্য স্বাস্থ্যকর। এই মুলাতে পটাশিয়াম এবং ফসফরাস কম থাকলে ও অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান অনেক বেশি থাকে । মূলা ভিটামিন সি এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি। মুলার মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা হৃদরোগ এবং ছানি বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে থাকে।

মূলা কিডনির অবস্থাকে ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং কিডনির যেকোনো রোগ বা সমস্যা দ্রুত রোধ করতে সহায়তা করে । মূলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে।ডায়াবেটিস রোগীরা মুলা খেতে পারেন। কারন মুলা আমাদের শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক সাহায্য করে। 

মূলা খুব কম ক্যালোরিযুক্ত একটি সবজি এবং এতে কোনও কোলেস্টেরল নেই। মুলা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীর সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। মুলা হজম শক্তিতে ভাল কাজ করে। 

১০. শালগম

শালগম ও শীতকালীন সবজি এটি কিডনি-বান্ধব ডায়েটের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার হতে পারে । আঁশযুক্ত এই শীতকালীন সবজিটিতে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। তারমধ্যে ভিটামিন বি ৬ এবং ম্যাঙ্গানিজ অন্যতম । শালগম খাওয়া অনেক উপকার রয়েছে  প্রতি ১০০ গ্রাম শালগমে ০.৫ গ্রাম আমিষ, ৬.২ গ্রাম শর্করা, ০.৯ গ্রাম আঁশ, ০.২ গ্রাম চর্বি, ২৯ কিলোক্যালরি শক্তি, ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৪৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন `সি` থাকে যা আপনার শরীরের অনেক কিছুর ঘাটতি পূরণ করবে।

শালগমে আরো আছে ভিটামিন কে এর মত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা সঠিকভাবে যা শরীরের কোথাও কেটে গেলে বা রক্ত বের হলে তা রক্তজমাট বাঁধার জন্য খুবই ভাল কাজ করে । শালগমে থাকা ভিটামিন ক্যালসিয়ামকে প্রকিয়াজাত করে এবং আমাদের ধমনীর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। শালগমে থাকা  লিউটিন নামক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হৃদযন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। শালগমে প্রচুর পরিমানে আঁশ থাকার কারণে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করতে সাহায্য করে।

প্রিয় পাঠক! আপনার যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য বা আপনার যে কোন প্রশ্নের উত্তর জানতে আমাদের প্রশ্ন-উত্তর সাইট Ask Panchmishali তে প্রশ্ন করুন।

শেষ কথা

উপরে চেষ্টা করেছি আলোচ্য কিডনি-বান্ধব খাবারগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার। কিডনি রোগে আক্রান্ত রেনাল ডায়েট অনুসরণকারী ব্যক্তিদের জন্য পছন্দ হওয়ার মত । আপনার কিডনির সমস্যা হলে আপনি এই ডায়েট অনুসরণ করতে পারেন।  আপনার কিডনির সমস্যা অনুযায়ী আপনার কিডনি বান্ধব ডায়েট করতে  চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নির্ধারণ করুন এটাই সবথেকে উত্তম হবে । আপনার  কিডনি সুস্থ্য ও স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর সব খাবার গ্রহণ করুন এবং নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ধন্যবাদ 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url