ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম: ওজন কমাতে চিয়া সিড হচ্ছে আদর্শ খাবার। চিয়া সিডে উচ্চমাত্রার ফাইবার ও প্রোটিন বিদ্যমান থাকে।এটি খেলে অনেক্ষন  পেট ভরা থাকে এবং অতিরিক্ত ক্ষুদা লাগার অনুভুতি দূর হয়ে যায়। এটি হজম প্রক্রিয়াকে আরো সাবলিল করতে সাহায্য করে। বিপাক ক্রিয়া ও ওজন কমাতে এটি অত্যন্ত কার্যকরী।

ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম। চিয়া সিড এর উপকারিতা 

চিয়া সিড সাইজে ছোট হলেও এটি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় প্রথম দিকের স্থান দখল করে আছে।পুষ্টিসমৃদ্ধ এই খাবারটি আমাদের শরীর আর মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। এটি সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত। আর এই সুপার ফুড হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে এর মধ্যে। প্রচুর পুষ্টি গুণ সম্পন্ন এই চিয়া সিড মানুষের দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে এটি অতিরিক্ত খাওয়াও ক্ষতিকর। তাই এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিৎ। 

ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড কি?

চিয়া সিড হচ্ছে মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া হিসপানিকা উদ্ভিদের বীজ। এটি মূলত মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর মরুভূমি অঞ্চলে বেশি জন্মায়। এই চিয়া সিড বা চিয়া বীজ দেখতে তিলের মতো, ছোট, এরা সাদা, ধূসর, বাদামী ও কালো রঙের হয়। এগুলোর ভালো একটি গুণ হচ্ছে এরা সব ধরণের আবহাওয়ায় হয়ে থাকে এবং পোকামাকড় সহজে এদেরকে আক্রমণ করতে পারে না। চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তোমকা দানার মতো। কিন্তু এগুলো তোমকা দানার চেয়ে আকারে ছোট। অনেকেই তোমকা দানার সাথে চিয়া বীজকে গুলিয়ে ফেলে।

চিয়া সিডের পুষ্টিগুণঃ

পুষ্টিকর খাবারগুলোর মধ্যে চিয়া সিড হচ্ছে অন্যতম। যেমনঃ- এক গ্লাস দুধের থেকেও বেশি ক্যালসিয়াম থাকে, কলার চেয়েও দ্বিগুণ পটাসিয়াম, বাদামের চেয়ে বেশি ওমেগা-3 থাকে এবং এতে প্রচুর অ্যান্ডিঅক্সিডেন্ট উপস্থিত। চিয়া সিডে রয়েছে ওমেগা-৩, ম্যাংগানিজ, ফাইবার, দস্তা, তামা, ফসফরাস, ফ্যাট, প্রোটিন,  কার্বোহাইড্রেট। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন বি,এ,ই,ডি, নিয়াসিন আয়রন, থায়ামিন, ক্যাফিক এসিড, দস্তা, সালফার, আয়োডিন, ম্যাগনেসিয়াম, থায়ামিন।

ওজন অনুযায়ী এতে রয়েছে ৬% পানি, ৪৬% শর্করা (যার ৮৩% ফাইবার),১৯% প্রোটিন এবং ৩৪% ফ্যাট।

বিশেষজ্ঞদের মতে এক আউন্স চিয়া সিডে রয়েছেঃ

  • ফাইবার-১১ গ্রাম
  • প্রোটিন-৪ গ্রাম
  • ফ্যাট-৯গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম-RDA এর ১৮%
  • ম্যাঙ্গানিজ- RDA এর ৩০%
  • ম্যাগনেসিয়াম- RDA এর ৩০%
  • ফসফরাস- RDA এর ২৭%
  • কার্বহাইড্রেটেড-৩ গ্রাম
  • এনার্জি- ১৩৭ ক্যালরি
  • জিঙ্ক-১মিলিগ্রাম
  • তামা-১মিলিগ্রাম
  • পটাসিয়াম-৮মিলিগ্রাম

সুপারফুড চিয়া সিডঃ

পুষ্টিগুণে ঠাসা উদ্ভিজ্জ খাদ্য বস্তু যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপযোগী, তাদেরকে সুপার ফুড বলা হয়। চিয়া সিড বা বীজ বর্তমানে পৃথিবীর সুপার ফুড গুলোর মধ্যে অন্যতম।যেমন-

  • দুধের থেকে ৫ গুণ বেশী ক্যালসিয়াম থাকে।
  • কমলার চেয়ে ৭ গুন বেশী ভিটামিন সি থাকে।
  • পালং শাকের চেয়ে ৩ গুন বেশী আয়রন থাকে।
  • কলার চেয়ে ২ গুণ পটাশিয়াম থাকে।
  • স্যামন মাছের থেকে ৮ গুণ বেশী ওমেগা-৩ থাকে।

আরও পড়ুনঃ চুলের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা 

চিয়া সিড কিভাবে ওজন কমায়?

ওজন কমানোর জন্য প্রথমে জানতে হবে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের গুরুত্ব সম্পর্কে। কেননা এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য অনাকাঙ্খিত ক্ষুধা থেকে দূরে রাখে। আর প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো চিয়া বীজ। চিয়া সিডে রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও খাদ্যআঁশ।যা ক্ষুধা কমাতে সহায়তা করে। আর এই প্রোটিন ও খাদ্যআঁশ দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে, এরফলে ঘন ঘন ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমে যায়। প্রতি আউন্স চিয়া সিডে রয়েছে ৯.৭৫ গ্রাম খাদ্যআঁশ এবং ৪.৬৯ গ্রাম প্রোটিন। সেখানে খাদ্যশক্তি রয়েছে ১৩৮ ক্যালরি।

চিয়া সিড এর উপকারিতা

চিয়া সিডে বিদ্যমান ফাইবার এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর কারণে আমাদের দেহের ইনসুলিনের সংবেদনশীলতার হার নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং খাবারের পর রক্ত শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল হয়। যারা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের জন্য চিয়া সিড বেশ উপকারী। নিচে এটির আরো উপকারিতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-

১. ওজন কমাতে চিয়া সিড

চিয়া সিডে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ফাইবার ও প্রোটিন। এটি ওজন কমাতে বেশ উপকারী। প্রতি ২৮ গ্রাম চিয়া সিডে থাকে ১০ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার। যা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যচাহিদার প্রায় ৩৫%। চিয়া সেডে বিদ্যমান প্রোটিন আমাদের ক্ষুধা নিবারণ ও অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণের প্রবণতা কমিয়ে দেয়। ফলে অতিরিক্ত ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না।

২. রক্তে ওমেগা-৩ বৃদ্ধি করে

চিয়া সিড দেহ ও মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড

গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমাদের রক্তে চিয়া সিড ওমেগা-৩ আলফা লিনোলিক এসিড (ALA) ১৩৮% পর্যন্ত এবং আইকোস্যাপেন্টেনোইক এসিড EPA ৩৯% পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে।

৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস

চিয়া সিডে বিদ্যমান যৌগগুলো আমাদের দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং দেহকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। যেমনঃ

  • ক্লোরোজেনিক এসিডঃ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • ক্যাফেইক এসিড: বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ খাদ্যদ্রব্যে থাকা এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের বিভিন্ন প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
  • কোয়ারসেটিন: এই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অস্টিওপোরোসিস, হৃদরোগ এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
  • কেম্পফেরল: ক্যান্সারসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে কার্যকর।

চিয়া সিডে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো গুরুরত্বপূর্ন ফ্যাটগুলোকে রক্ষা করে। এবং আমাদের দেহের ফ্রি র্যাডিক্যাল নামক বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল যৌগের বিরুদ্ধে কাজ করে দেহকে সুস্থ রাখে। এছাড়াও চিয়া সিডের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্র এবং যকৃতের সুস্থ কার্যক্রমে সহায়তা করে।

আরও পড়ুনঃ হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায়। হাত পা ঘামার ঔষধ

৪. রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে

চিয়া সিড ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখে। যার ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।চিয়া বীজে  বিদ্যমান ফাইবার  রক্তে প্রচুর পরিমাণে চিনির শোষণকে ধীর করে দেয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়।এটি ইনসুলিন তৈরি করতে সহায়তা করে এবং শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।আমাদের রক্তে শর্করার হার বৃদ্ধি পেলে স্ট্রোক, হৃদরোগ সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি  বেড়ে যেতে পারে। 

৫. হাড়ের স্বাস্থ্য ও শক্তি বৃদ্ধি করে

চিয়া   সিডে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যা হাড়ের স্বাস্থ্য এবং শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। হাড়ের সুস্থ এবং  শক্তিশালী করার জন্য প্রোটিনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামও প্রয়োজন।চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ম্যাগনেসিয়াম। এগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়ামের পরিমাণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিডে থাকে প্রায় ৬৩১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ।যদি কেউ দুধ বা দুগ্ধ জাত খাবার খেতে না পারেন  তাদের জন্য খুব ভালো একটি ক্যালসিয়াম এর উৎস চিয়া সীড। এটি হাডঁকে মজবুত করতে সাহায্য করে। আর হাড়ঁকে শক্তিশালী করার কারণে হাড়ের কোনো সমস্যা হয় না।

৬. হৃদ-রোগের ঝুঁকি কমায়

চিয়া সিডে রয়েছেরপ্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন এবং ওমেগা-৩  যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।আমাদের রক্তে LDL অর্থা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিয়া সিডে বিদ্যমান খাদ্যআঁশ এই LDL এর মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। ফলে হৃদেরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়াও চিয়া সিড ট্রাইগ্লিসারাইড, প্রদাহ, উচ্চরক্তচাপ, ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং পেটের চর্বি সহ কিছু ঝুঁকির কারণগুলি হ্রাস করতে পারে।

৭. হজম শক্তি বাড়ায়

চিয়া সিড হজমে সহায়তা করে। এতে রয়েছে  প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা মলাশয় পরিষ্কার রাখে। চিয়া  সিড পাকস্থলীতে একটি জেলের মতো ধারাবাহিকতা তৈরি করে, যা অন্ত্রের আস্তরণকে নিরাময় করে এবং প্রশমিত করে। এটি নিয়মিত সেবনে  পেট পরিষ্কার থাকবে কোষ্টকাঠিন্য দূর হবে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে

৮. উচ্চমানের প্রোটিন

প্রোটিন আমাদের দেহের জন্য খুবই উপকারী।আর চিয়া সিডে যথেষ্ট পারিমাণ প্রোটিন রয়েছে।তবে অধিক প্রোটিন গ্রহণ দেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।সেক্ষেত্রে চিয়া সিড বেশ উপযোগী একটি খাবার।প্রতি আউন্স অর্থা ২৮গ্রাম  ২৮গ্রাম চিয়া সিড থেকে ৪গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। যাদের প্রোটিন গ্রহণে সমস্যা রয়েছে বা যারা নিরামিষ ভোজী, তারা নিয়মিত চিয়া সিড গ্রহণের মাধ্যমে প্রোটিন পেতে পারেন।তবে শিশুদের ক্ষেত্রে প্রোটিনের উৎস হিসেবে এটি ব্যবহার না করাই ভালো। 

৯. সুষম খাদ্যাভাসে সহায়ক

আমরা দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততার জন্য সুষম খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তাই যারা স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন তারা দৈনন্দিন ডায়েটে চিয়া সিড যোগ করতে পারেন।

চিয়া সিড দিয়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর রেসিপি তৈরি করা যায় এবং যেকোনো কিছুতেই এটি ব্যবহার করা যায়। এটি খুব সহজে পানি শোষণ করে নেয় বলে যেকোনো জুস, পুডিং, স্মুদি ইত্যাদি তরল খাবারে চিয়া বীজের ব্যবহার বেশ প্রচলিত। 

১০. ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস

গবেষকরা বলেছেন, চিয়া সিড এ স্যালমন মাছের চেয়েও বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। যা আমাদের  হার্টকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

১১. চিয়া সীড বা চিয়া বীজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে।

১২. চিয়া সিড মলাশয় পরিষ্কার রাখে,যারফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে।

১৩. চিয়া সিড আমাদের শরীর থেকে টক্সিন (বিষাক্ত পদার্থ) বের করে দেয়

১৪. চিয়া সীড ভাল ঘুম হতে সহায়তা করে।

১৫. চিয়া সিড ত্বক,নখ ও চুল সুন্দর রাখে।

১৬. গৃহপালিত পশুর খাদ্য হিসেবেও চিয়া সিড ব্যবহৃত হয়।

১৭.চিয়া সীড হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করে।

১৮. চিয়া সীড বা চিয়া বীজ ক্যান্সার রোধ করে।

আরও পড়ুনঃ কিডনি ভাল রাখতে যেসব খাবার খাবেন। কিডনি ভাল রাখার সহজ উপায়। 

চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা 

চিয়া সিডের যেমন অনেক উপকারীতা আছে তেমনি এর অপকারিতাও রয়েছে। নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো-

১.বদহজমে সমস্যা:

চিয়া সিডে খাদ্যআঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বদহজম বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।

২.অ্যালার্জি:

চিয়া সিডে যাদের অ্যালার্জি রয়েছে, যদি তারা ভুলবশত চিয়া সিড খেয়ে ফেলে তবে বমি, ডায়রিয়া বা চুলকানি হতে পারে। এর থেকে অ্যানাফিল্যাক্সিস হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাই চিয়া সিড খাওয়ার পূর্বে চিকি/সকের পরামর্শ নিয়ে টেস্ট করানো উচিত।

৩.দম বন্ধ ও শ্বাসকষ্ট হওয়া:

চিয়া সিড শুকনো হওয়ায় এগুলো সরাসরি খেলে গলায় আটকে শ্বাসরোধের ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই চিয়া সিড খাওয়ার পূর্বে অন্তত ১০-১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখা উচিত।

৪.অন্যান্য শারিরীক জটিলতা:

চিয়া সিড দেহের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তচাপ কমায়।তবে অতিরিক্ত চিয়া বীজ খেলে রক্তচাপ বেশি কমে যেতে পারে। আবার দেহের শর্করার মাত্রা বেশি পরিমাণ কমে গেলে, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।

৫. ওজন কমার ক্ষেত্রে:

অতিরিক্ত পরিমাণে চিয়া বীজ খাওয়ার ফলে ওজন অতিরিক্ত কমে যেতে পারে। এরফলে দেহের বিভিন্ন সমস্যাও হতে পারে।

৬. পেটের সমস্যা:

 অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে পেটের সমস্যাও হতে পারে। কারণ চিয়া সিডের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বিদ্যমান থাকে। এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই যদি চিয়া সিড গ্রহণ করে আপনার কোন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে এটি সেবন করা বন্ধ করুন।

৭. ক্যান্সারঃ

ক্যান্সার প্রতিরোধে চিয়া সিডের ভূমিকা রয়েছে। তবে কিছু গবেষকদের মতে, চিয়া সিড ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ব্যাপারে এখনো আরো অনেক গবেষণা চলছে।

৮. রক্তের ঘনত্ব হ্রাসঃ

চিয়া সিডের ওমেগা-৩ রক্ত পাতলা করার পাশাপাশি যেকোনো ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

অতএব কারো ডায়বেটিস থাকুক বা না থাকুক, চিয়া সিড খাওয়ার সময় পরিমাণমত খাওয়া উচিৎ। এরফলে দেহের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং অনেক উপকারও পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিন ২ থেকে ৪ চামচ চিয়া সিড খাওয়াই উত্তম। 

ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড ওজন কমানোর জন্য খুবই উপকারী। কারণ এর মধ্যে চর্বি শোষণ করার ক্ষমতা বেশী থাকে। এতে বিদ্যমান ফাইবার বা খাদ্যআঁশ দ্রবণীয়। যা প্রচুর পরিমান পানি শোষণ করে জেলির ন্যায় থকথকে আঠালো বর্ণ ধারণ করে। এবং আমাদের পাকস্থলীতে গিয়ে বিপাকপ্রক্রিয়ার গতি ধীর করে আনে। এরফলে পেট অনেক্ষণ ভরা থাকে। এবং আপনার ক্ষুদার লাগার অনুভূতি কম লাগে।অথবা অল্প খেলেই পেট ভরে গেছে বলে মনে হয়।সুতরাং এটি আপনাকে কম ক্যালরি গ্রহনে তথা ওজন কমাতে সহায়তা করে। ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম হলো-

খালি পেটে সকালে  এবং রাতে ঘুমানোর আগে ১গ্লাস পানির মধ্যে ২ চা চামচ চিয়া সিড ও ২ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। খাওয়ার ৩০মিনিট পূর্বে নরমাল পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সুতরাং দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চিয়া সিডের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড যেমন শুধু খাওয়া যায় তেমনি অন্যান্য খাবারের সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়া। এটি খাওয়ার নিয়ম বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।যেমন- বিভিন্ন ফলের রসের সাথে, বেইক করা খাবারে ব্যবহার করে, সালাদা বা দইয়ের উপর ছিটিয়ে বা পানিতে মিশিয়ে এটি খাওয়া হয়ে থাকে। এটি স্বাদ ও ঘ্রাণহীন হওয়ার কারণে অনেক দেশে রুটি বা বিস্কুট এর সাথেও খেয়ে থাকে। নিচে চিয়া সিড খাওয়ার কিছু নিয়ম দেওয়া হলো-

১. স্মুথি বানিয়ে

চিয়া সিড খাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হলো স্মুথি বানিয়ে খাওয়া। অনেকেই স্মুথি বানিয়ে খেতে পছন্দ করেন। ব্লেন্ডার দিয়ে টক-দই, চিয়া সিড, ও শসা একসঙ্গে মিক্সড করে স্মুথি বানিয়ে খেতে পারেন। আবার কলা, খেজুর, বাদাম ও চিয়াসিড একসাথে স্মুথি বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

২. সালাদের সাথে

যেকোন সালাদ বা কাটা ফলমূলের  উপরে চিয়া সিড ছিটিয়ে খেতে পারেন। চিয়াসিড খাওয়ার নিয়মের মধ্যে এটিই সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয়। আবার রান্না করা যেকোন খাবারে চিয়া সিড ছিটিয়ে খাওয়া যায়।

৩. ড্রিংকস

এটি কোমল বা হার্ড ড্রিংকস নয় বরং এটি চিয়া ড্রিংকস। ২ কাপ পরিমান নারিকেলের

পানি অথবা আপনার পছন্দ মতো ফলের রসের সঙ্গে ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ চিয়া বীজ দিয়ে মিশিয়ে নিন। প্রয়োজন হলে এর সাথে পানিও যোগ করতে পারেন।

৪. পান করা

১ গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ চিয়া সিড ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এটি খালি পেটে খেলে শরীরের জন্য খুব উপকার হয়। অথবা সারাদিনে প্রতি কাপের চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।

আবার স্যুপের সাথেও চিয়া সিড খাওয়া যায়। সকালে এবং রাতে পানি ও লেবুর রসের সঙ্গে চিয়া সিড খেলে পেটের উপকার হয়।

৫. বাড়ির রান্না করা খাবারে

বাসায় তৈরী করা বিভিন্ন খাবার যেমন বিস্কুট, কেক, পরোটা,  পুডিং বানানোর সময় তাতে চিয়া সিড মেশাতে পারেন। এতে খাবারটির অনেকগুন পুষ্টি বেড়ে যায়।

চিয়া সিড কোথায় পাওয়া যায়?

এই চিয়া সিড বা চিয়া বীজ বাংলাদেশেও পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এত সহজপ্রাপ্য না হলেও বড় বড় দোকানে বা সুপারশপে এটি পাওয়া যায়।

আবার বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইন শপেও এই চিয়া বীজ পাওয়া যায়। আপনি চাইলে এই পুষ্টিকর ও উপকারী বীজটি অনলাইন থেকেও কিনতে পারেন।

চিয়া সিড কোথায় পাওয়া যায়?

চিয়া সিডের দাম কত?

এক কেজি চিয়া সিড বা চিয়া বীজের মূল্য ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা। তবে আপনি যদি কম পরিমাণে কিনতে চান তাহলে প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া বীজের দাম হবে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

চিয়া সিড এর গাছ

চিয়া সিড এর গাছ

শেষ কথাঃ

চিয়া সিড বা চিয়া বীজ একটি সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত। প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি গুণ সম্পন্ন এই বীজ মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী।

তবে মনে রাখবেন চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে।যদি প্রতিদিন খাবারে চিয়া বীজ রাখেন তাহলে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া আবশ্যক। তবে শুধু চিয়া বীজই খেলে হবে না, সুষম খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে এটি খেতে হবে। সবার শরীরের ধরণ এক হয় না, যারা সুগারের রোগী বা যারা ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করছেন তারা পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করে এবং চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম মেনে এটি খাওয়া শুরু করুন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url