হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া ১০টি উপায়।

হাই প্রেসার কমানোর উপায়ঃ বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত।এটি নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ চিন্তিত থাকেন। সাধারণত সুস্থ মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৭০ থেকে ১৪০/৯০ –এর মধ্যে৷ কিন্তু এর ব্যাতিক্রম হলেই মুশকিল।এটি হার্টের রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। হৃদযন্ত্র বিকল হওয়া, কিডনি নষ্ট হওয়া থেকে মস্তিষ্কের ক্ষতির মতো মারাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে এই উচ্চ রক্তচাপের কারণে।

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক উপায়

হাই প্রেসার, যাকে আমরা উচ্চ রক্তচাপও বলি। এটি একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। যখন রক্তের অত্যধিক চাপ পড়ে ধমনীতে তখনিই এটি ঘটে।এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। হৃদযন্ত্র দৈনিক যতো বেশি রক্ত সরবরাহ করে, ধমনী সরু হয়ে গেলে তাতে চাপ পড়ে। যাকে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপ। প্রথমত উচ্চ রক্তচাপের কোনো টের পাওয়া যায় না ফলে তা প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা যায় না। তাই দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা না করলে হার্ট অ্যটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্ত চাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়

হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়

হাই ব্লাড প্রেসার কমাতে চাইলে আমাদের আগে জানতে হবে ব্লাড প্রেসার কি, এটি বাড়ার কারণ কি অথবা কী কী কারণে হাই ব্লাড প্রেসার বাড়ে।প্রিয় পাঠক,আজকের এই আলোচনায় আমরা জানব-ব্লাড প্রেসার কি, ব্লাড প্রেসার বাড়ার কারণ কি, প্রাকৃতিক উপায়ে বা ঘরোয়া উপায়ে এটি কিভাবে কমানো যায়। হাই ব্লাড প্রেসার কমাতে ওষুধই একমাত্র সমাধান নয়, আমরা চাইলে প্রাকৃতিক উপায়েও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমাদের জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে ওষুধ ছাড়াই ব্লাড প্রেসার কমিয়ে আনতে পারব।

আরো পড়ুনঃ ছেলেদের মাথার খুশকি দূর করার উপায়। 

ব্লাড প্রেসার কি?What is Blood Pressure? 

প্রবাহমান রক্ত রক্তনালীর প্রাচীর গাত্রে যে পার্শ্বচাপ সৃষ্টি করে তাকে ব্লাড প্রেসার (blood pressure) বলে।

লো ব্লাড প্রেসার কি? Low Blood Pressure 

সাধারণত একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ হওয়া উচিত ১২০/৮০। ব্লাড প্রেসার যদি ৯০/৬০ এর আশেপাশে থাকে তা হলে একে লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ বলা হয়।

ব্লাড প্রেসার বাড়ার কারণ কি? High pressure 

ব্লাড প্রেসার বাড়ার প্রধান কারণ গুলো হচ্ছে-মানসিক চাপ, শারীরিক চাপ,অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন, ওজনাধিক্য, ধূমপান, মদ্যপান, তেল-চর্বিজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ প্রভৃতি। জীবনাচরণ পরিবর্তন করে ব্লাড প্রেসার বাড়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে পারবেন।

হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ১০ টি উপায় ও টিপসঃ

1)  নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়াম করাঃ

ব্লাড প্রেসার কমানোর অন্যতম উপায় হল ব্যায়াম। নিয়মিত অনুশীলন রক্তকে পাম্প করে  হার্টকে শক্তিশালী করে এবং আরও দক্ষ করতে সহায়তা করে, যা ধমনীতে চাপ কমায়। উচ্চ রক্তচাপ ব্যাক্তিদের প্রতিদিন অন্তত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট শরীরচর্চা করা আবশ্যিক। প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের পরিমিত ব্যায়াম, যেমন হাঁটাচলা বা প্রতি সপ্তাহে ৭৫ মিনিটের জোরালো ব্যায়াম রক্তচাপকে হ্রাস করতে এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়তা করে। ভোরের সময় হলো হাঁটাহাঁটি করার উপযুক্ত সময় । হাঁটাহাঁটিতে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার ৪ থেকে ৯ মিলিমিটার কমে যাবে। অতএব, ব্যায়ামই হল ওষুধ ছাড়া রক্তচাপ কমানোর মূল চিকিত্‍সা।

আরো পড়ুনঃ কিডনি ভাল রাখতে যেসব খাবার খাবেন। কিডনি ভাল রাখার সহজ উপায়।

2) পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান:

পটাসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। এটি লবণের প্রভাব কমায়।শরীরকে সোডিয়াম থেকে মুক্তি পেতে এবং রক্তনালীগুলির উপর চাপ কমাতে এটি সহায়তা করে। যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাঁদের জন্য পটাশিয়াম অত্যন্ত জরুরি। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গুলো হচ্ছে- তরমুজ, কলা, কমলা, টমেটো, আলু, টুনা, সালমন, বাদাম, মটরশুটি, দুধ, দই ইত্যাদি।

3)হতাশা ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করাঃ

ব্লাড প্রেসার বাড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে হতাশা ও দুশ্চিন্তা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের জন্য একটি বিশেষ করণীয় হলো, জীবন থেকে মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলা। মানসিক চাপ সম্পূর্ণরূপে দূর করা সম্ভব নাও হতে পারে, কিন্তু যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা করতে হবে।’ প্রতিদিন শান্ত পরিবেশে কিছুসময় মেডিটেশনে রত থেকে রক্তচাপ ও মানসিক চাপ দুটোই কমাতে পারেন।

4) অ্যালকোহলযুক্ত খাবার পরিহার করুন:

অ্যালকোহল ব্লাড প্রেসার বাড়ার অন্যতম একটি কারণ। হালের গবেষণা বলছে অ্যালকোহল প্রায় ১৬ শতাংশ রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। অতএব, ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ কমাতে অ্যালকোহল এবং অ্যালকোহলযুক্ত খাবার পরিহার করুন।

5) সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার পরিহার:

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে প্রথমেই লবণ খাওয়া কমাতে হবে।কেননা লবণ খেলে রক্তনালির রক্তের ঘনত্ব ও চাপ বেড়ে যায়। ফলে রক্ত চাপও বেড়ে যায়। তবে শুধুমাত্র লবণ নয় প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলেও রক্তচাপ বাড়ে। রান্না ব্যতীত কাঁচা লবণ খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। যদি সম্ভব হয়, রান্নাতেও লবণ কম ব্যবহার করুন। সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কম খাবেন।

6) ডার্ক চকোলেট ও নন-ক্ষারযুক্ত কোকো খানঃ

রক্ত চাপ কমানোর অন্যতম উপাদান হলো ডার্ক চকলেট।ডার্ক চকোলেটে রয়েছে উপকারী যৌগ যা পলিফেনল এবং ফ্ল্যাভোনয়েড নামে পরিচিত।এই যৌগগুলি শুধুমাত্র রক্তচাপই কমায় না বরং নানারকম হৃদরোগ সম্পর্কিত অন্যান্য পরামিতি সমূহ আরও উন্নত করতে সহায়তা করে। চকলেটে কোকোর পরিমাণ কমপক্ষে শতকরা ৭০ ভাগ থাকতে হবে। তবে অতিরিক্ত ডার্ক চকলেট খাওয়া যাবে না। কেননা এতে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে।তাই পরিমান মতো ডার্ক চকলেট খান।

7) অতিরিক্ত ওজন কমানঃ

শরীরের টিস্যুতে ফ্যাট জমলে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। তাতে চাপ পড়ে হার্টের ওপর। তাই ওজন বেরে গেলে সীমিত আহার করা উচিত এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা। ওষুধ খেয়ে ওজন কমানো বিপজ্জনক। তাই ব্যায়ামের সাহায্যে ওজন কমানো উচ্চ রক্তচাপ কমাতে অধিক কার্যকর।

8)ধূমপান পরিহার করুনঃ

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এটি শরীরে নানা ধরণের বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে ধমনী ও শিরার নানারকম রোগ-সহ হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। ধূমপান রক্তনালিকে সংকীর্ণ করে রাখে। রক্তে খারাপ চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়; ভালো চর্বির পরিমাণ কমে যায়। ফলে রোগীর রক্তচাপ বেড়ে যায়। ধূমপান করলে শরীরে নিকোটিনের প্রভাবে অ্যাড্রেনালিন উৎপন্ন হয়। ফলে হৃৎপিন্ডের স্পন্দন বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। তাই ধূমপান পরিহার করুন।

9) ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান:

শরীরকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে ক্যালসিয়াম থেকে বঞ্চিত করলে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে।এমনকি অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ দেহের জন্যও হুমকি তৈরি করতে পারে। তাই সঠিক ভারসাম্য এবং আপনার ডায়েটে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে- দুধ, কমলা, পনির, বাদাম, চিংড়ি, গাড় সবুজ শাঁক।

10) পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানোঃ

যাদের ব্লাড প্রেসার রয়েছে তাদের প্রতিদিন সাত বা আট ঘণ্টা ঘুম খুব জরুরী। যদি রাতে ঘুম কম হয় তাহলে রক্ত চাপ বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। ঘুম কম হলে হরমোনের নিয়ন্ত্রণ এলোমেলো হয়ে যায়।ফলে রক্তচাপ আরও বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাই পারে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে। শরীর ভাল রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চা করা এবং দৈনিক সাত বা আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অন্তত সাত বা আট ঘণ্টা  ঘুমোন।

শেষ কথা

উচ্চ রক্ত চাপ বা হাই প্রেসার এটা খুবই মারাত্মক সমস্যা। অনেক সময় এটা থেকে মারাত্মক অবস্থা তৈরী হয়।তাই সবার উচিৎ ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করা। আশা করি আজকের আর্টিক্যালটি ভাল লাগবে। ধন্যবাদ 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url