হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায়। হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামা একটি সাধারন সমস্যা। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যাদের অতিরিক্ত হাত ও পা ঘামার সমস্যা রয়েছে। শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘামের কারনে দুরগন্ধ বের  হয়। আবার বেশি টাইট মোজা বেশি ক্ষন ধরে পরে থাকলে ও পায়ের তালু থেকে ঘাম হয়। অনেক সময় দেখা যায় পরিক্ষার সময় বেশি সময় ধরে কলম হাতে রাখার কারনে ও ঘাম হতে পারে। আবার হাতে টাকা রাখলে ও দেখা যায় হাত ঘামছে। 

দীর্ঘসময় ধরে পা ভিজা থাকলে পায়ে ফাংগাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ হয়ে থাকে। পা ঘামা এই রোগকে বলে Planter Hyperhidrosis. তাই যদি কোন মানুষের হাত এবং পা উভয় বেশি পরিমানের ঘামে তাহলে তাকে বলে palmoplanter Hyperhidrosis.

হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায়। হাত পা ঘামার ঔষধ

তাই আজকের এই আর্টিক্যালে আমরা হাত পা ঘামার কারণ, করণীয় ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

অতিরিক্ত হাত পা ঘামার কারণ কি?

আমারা অনেকেই জানি না কি কারনে আমাদের হাত - পায়ে ঘাম হয়। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কারনে হাত - পায়ের ঘাম হয়ে থাকে।

১/ অতিরিক্ত চা, কফি  অ্যালকোহল  পানের ফলে শরীরে ঘাম হয়ে থাকে।

২/ অনেক সময় দেখা যায় ব্লাড সুগার লো এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলো ও শরীরে ঘাম হতে পারে।

৩) খাবারের ওষুধের খারাপ পাশ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার কারনে অনেক সময় ঘাম হয়ে থাকে।

৪)  টাইট মুজা পরার কারনে অনেক সময় ঘাম হয়।

৫)বেশি ঝাল দিয়ে খাবার খেলে হয়।

আরো পড়ুনঃ ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা

হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায়

১)  আমাদের আশে পাশে এমন অনেক কিছু আছে যা ব্যবহার করলে  হাত -পায়ের তালুর ঘাম কমে যায়।  মার্কেটে  অনেক রকমের অ্যান্টপার্সপিরেন্ট পাওয়া যায় ।  রাতে ঘুমানোর আগে হাত ও পায়ের তালুতে ভালো করে লাগিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে ভালো করে ধুয়ে নিন।

২) যারা খুব বেশি  চা, পান করেন অথবা কফি এবং  ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় খাওয়ার অভ্যাশ  আছে তারা এইসব বাদ দিতে পারেন।

৩) অতিরিক্ত ঝাল খাওয়া এবং -মশলাযুক্ত  খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

৪)নিয়মিত বেশি করে পানি পান করুন।

৫) প্রতিদিন ঠিক মতো দুই বেলা করে গোসল করুন। গরম পানি দিয়ে গোসল করা বাদ দিতে হবে, কারন গরম পানি দিয়ে গোসল করলে  শরীররের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ফলে হাত ও পায়ে ঘাম হয়।

৬)  সব সময় পানি দিয়ে হাত পা ভালো করে পরিস্কার করুন। এতে কর ঘামের দুরগন্ধ দূর হয়ে যাবে।

৭) অনেকেই আছে পা পানি দিয়ে ধোয়ার পর পা ভেজা ভাবেই রেখে দেই।এতে করে ঘামের গন্ধ বেশি হতে পারে।তাই হাত এ পা ধোয়ার পর ভালো করে কাপড় দিয়ে হাত - পা মুছে নিতে হবে।

৮)  কখনো ভেজা পায়ের জুতো পরবেন না।জুতা পরার আগে পা এবং জুতা পরিস্কার করে নিবেন।

৯) টাইট জাতীয়  মোজা না পরাই ভালো

১০)ঘরের মধ্যে চেষ্টা করবেন খালি পায়ে হাটার পরিস্কার মেঝেতে খালি পায়ে হাটুন।

আরো পড়ুন: গলা ব্যাথার ঔষধ কি? দ্রুত গলা ব্যাথা কমানোর উপায়।

হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায়

১. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার 

হাতের তালু এবং পায়ের তালুর ঘাম থেকে সহজেই মুক্তি পাবার প্রধান এবং অন্যতম উপায় হচ্ছে, অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা। এই সিডার ব্যবহার করলে খুব তারাতাড়ি হাত ও পায়ের তালুর ঘাম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
তাই আমারা এটি রাতে ঘুমানোর আগে খুব ভালো করে আমাদের হাতের ও পায়ের তালুতে লাগিয়ে রাখবো। সারা রাত এই সিডাটি লাগিয়ে রেখে সকালে ধুয়ে নিবো। কেউ চাইলে ধোয়ার পর হালকা পাউডার লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে করে হাতের তালু আর পায়ের তালু খুব নরম থাকবে এবং ঘামবে না

১. পানি পান করা

পানি আমাদের শরীরের জন্য খুবি উপকারি। পযার্য়ের পরিমানের পানি খেলে সহজে কোন রোগ হয় না। তাই  হাত ও পায়ের তালুর ঘাম কমানোর জন্য প্রচুর পরিমানের পানি পান করা উচিত। হাত ও পা সব সময় পানি দিয়ে পরিস্কার রাখুন।এতে করে আপনার  শরীররের তাপমাত্রা ঠিক থাকবে এবং ঘাম ও খুব কম হবে। 

৩. গ্রিন টি 

আমরা অনেকেই গ্রিন টি  পান করি।আপনারা কি জানেন গ্রিন টি ব্যাকটেরিয়ার  দূর করতে সাহায্য করে। গ্রিন টি পান করার ফলে আমাদের শরীরে যে  অতিরিক্ত ঘাম হয় তা কমিয়ে আনে। আমাদের শরীরের লোম কুপ গুলো বন্ধ করে দেয়। এছাড়া ও গ্রিন টি পান করার ফলে ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন ২- ৪ বার এক কাপ করে  গ্রিন টি পান করা। এতে শরীররের ঘাম কম হবে অন্যদিকে শরীর ও মন সতেজ থাকবে।তাছাড়া  এই কাজটি করতে পারেন গ্রিন টি সাথে কিছু  বরফের  টুকরো  রেখে  তার সাথে তুলো ভিজিয়ে তা হাত ও পায়ের তালুতে লাগাতে পারেন 

৪. বেকিং সোডা 

সবচাইতে সহজ এবং কার্যকারি  উপায় হলো বেকিং সোডার পানি দিয়ে হাত ও পা ভিজিয়ে রাখুন। বেকিং সোডা হলো  খুবি উপকারি একটি উপায় যার দ্বারা  হাত-পায়ের তালুর ঘাম কমানো যায়। তাই একটা বালতিতে হালকা গরম পানি নিয়ে তাতে ৪ টেবিল চামচ বেকিং সোডা নিয়ে, পানির সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। কমপক্ষে ১ ঘন্টা মিশ্রণটি রেখে দিবেন। ১ ঘন্টা পর হাত ও পা  ভিজিয়ে রাখুন,এবং হাত ও পা ভালো  করে ঘষতে থাকুন। আধা  ঘণ্টা পর পানি থেকে হাত ও পা উঠিয়ে রাখুন এবং পরিস্কার কাপড় দিয়ে  মুছে ফেলুন।

৫. লেবুর রস 

লেবুর রস হাত ও পায়ের তালুর ঘাম কমাতে সাহায্য করে। লেবুর রসে আছে ভিটামিন সি। লেবুর রসে আছে  খুব ভালো উপাদান যা সুগন্ধ প্রাকৃতিক   ডিওডারেন্টের কাজ করে থাকে।তাই আপনারা চাইলে লেবুর রস হাতের তালু এবং পায়ের তালুতে ভালো করে লাগিয়ে রাখতে পারে।এতে করে ঘাম দূর হয়ে যাবে। তবে মাথা রাখতে হবে যে যদি আপনার ত্বক  খুব বেশি সেনসিটিভ হয়,  তাহলে লেবুর রসের সাথে   সামান্য  পরিমানের পানি মিশিয়ে হাতে ও পায়ের তালুতে লাগিয়ে রাখতে পারেন।

৬. আলু 

আলুতে আছে অনেক শর্করা উপাদান।আলু যেমন শরীরের জন্য উপাকারি তেমন হাত ও পায়ের তালুর ঘাম দূর করতে ও বেশ কার্যকারি।আলু  শরীরের ঘাম শোষণ করতে  সাহায্য করে। তাই আলু পাতলা করে কেটে  তা হাতের ও পায়ের তালুতে ঘষতে পারেন। এর পর পানি দিয়ে ভাল করে হাত- পা ধুয়ে নিতে হবে। আপনি চাইলে শুধু  হাত ও পায়ে না।শরীরের যে যে অংশে ঘাম হয়, সে জায়গায় আলু লাগাতে পারেন।

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার ঔষধ যারা খুজছেন তাদের জন্য বলি।   হাত পা ঘামার ঔষধ হিসেবে আপনি এলোপ্যাথিক বা হোমিওপ্যাথিক ২ টায় ব্যবহার করতে পারেন। এলোপ্যাথিক ঔষধের ক্ষেত্রে সাধারণত ডাক্তাররা হাইপারহাইড্রোসিস এর চিকিৎসা এর ক্ষেত্রে প্রপানথেলিন ব্রমাইড অথবা হাতে অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডযুক্ত লোশন ব্যবহারের কথা বলে থাকে। এ জাতীয় দুটি ঔষধ হল:

  • প্রোকাইন্ড টেবলেট (Prokind)
  • ড্রাইকেয়ার স্প্রে (Dricare)

হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায়। হাত পা ঘামার ঔষধ

এই ঔষধ গুলো তিনবেলা ব্যবহার করতে বলা হয়।
কখনো কখনো এই ঔষধ গুলো ব্যবহারের পর ও হাত পা ঘামা ঠিক হয়না। যাদের মারাত্মক সমস্যা তারা এরপর ও যদি ভাল না হয় তাহলে এরপর ও কিছু চিকিৎসা রয়েছে তা হলো  iontophoresis থেরাপি ।এছাড়া ও আরেকটি পদ্ধতি রয়েছে তা হল  ইঞ্জেকশন। ইঞ্জেকশন প্রদানের মাধ্যমে ও এই হাত পা ঘামা ভাল হয়। ইঞ্জেকশন টির নাম হল
বটুলিনাম টক্সিন।

হাত পা ঘামার হোমিও চিকিৎসা

হাত পায়ের তালু ঘামা কমানোর আরেকটি চিকিৎসা হচ্ছে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা।

তবে বেশ কয়েকটি চিকিৎসার মধ্যে হোমিও প্যাথি চিকিৎসাটি অনেক বেশি সময় নিয়ে করতে হয় এবং এটি করতে খুব বেশি  ধৈর্য ধরে  চিকিৎসাটি সম্পুর্ন করতে হয় 

বহু বছর ধরে এই চিকিৎসাটি চলে আসছে হাত ও পায়ের ঘাম কমানোর জন্য। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার  অনেক  ঔষধ আছে  যেগুলো খেলে  আপনার হাত ও পায়ের ঘাম হওয়া অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। প্রথম প্রথম খেলে ভালো উপকার পাবেন,তাই বলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা যাবে না।

দীর্ঘ সময় নিয়ে খেতে হবে এবং চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। বলা যায় যে, হাত পা বেশি ঘামানো দূর করার একমাত্র ওষুধ হলো বা চিকিৎসা হলো হোমিওপ্যাথ মেডিসিন।  তাই আমাদের মধ্যে যাদের হাত - পায়ের তালু ঘামায় এবং শরীরের খুব বেশি ঘাম হয় তাদের উচিত একজন ভালো মানের আজই হোমিও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।

ইনশাল্লাহ  আশা করা যায়, এক মাসের মধ্যে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলে  এই রোগ থেকে মুক্তি পাবে। 

হাত- পায়ের ঘাম কমানোর জন্য  হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ওষুধ  r32 dr.reckeweg নামক  হাইপারহাইড্রোসিস ড্রপটি ব্যবহার করতে পারেন। এই ওষুধটি হলো জার্মানি  এবং এর উপকারিতা অনেক বেশি, যা ঘাম কমাতে সাহায্য করে।

হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায়। হাত পা ঘামার ঔষধ

এই ওষুধটি ব্যবহার করার নিয়ম হলো প্রতিদিন খাওয়ার পরে ১১-১৬ ফোটা ৩ বেলা করে খেতে হবে।  এক থেকে দেড় মাস নিয়মিত সেবন করলে  এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে এই চিকিৎসাটি দীর্ঘসময় নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে এবং ওষুধ সেবন করতে হবে তা না হলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে না।

আরো পড়ুনঃ অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ। অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায়। 

শেষ কথা

হাত পা ঘামা সাধারণ একটি সমস্যা। এতে বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। উপরে উল্লেখিত নিয়ম গুলে মেনে চললে পাশাপাশি কিছু ঔষধ খেলে আশা করি এই সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে পারেন।

Next Post Previous Post
1 Comments
  • নামহীন
    নামহীন ১৩ আগস্ট, ২০২৩ এ ১২:০৯ AM

    এখানে যত ওষুধের নাম দিছেন সব সেবন করছি কোনো কাজ হয় নাই

Add Comment
comment url