চুলের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা

 চুলের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী নানা ঔষধি গুণসম্পন্ন একটি উদ্ভিদ। এতে নানা রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা রয়েছে। একে জাদুকরি উদ্ভিদও বলা হয়। ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার জেল যেমন গুরুত্বপূর্ণ  তেমনি আমাদের স্বাস্থ্য এবং চুলের যত্নে অ্যালোভেরার জেল অত্যন্ত কার্যকরী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেলস, ভিটামিন এবং প্রোটিন যা আমাদের নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে চুলকে ঘন কালো উজ্জ্বল এবং মসৃণ করে তোলে।

অ্যালোভেরার ব্যবহার

অ্যালোভেরা ক্যাকটাস বা ফণীমনসা জাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, জিঙ্ক, অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিন-এ, বি৬ ও বি২, যা স্বাস্থ্যরক্ষার বিভিন্ন কাজে লাগে। এছাড়াও এটি চুলের জন্য খুবই কার্যকরী। এর মধ্যে বিদ্যমান অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা চুল পড়া ও খুশকির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এবং চুলের শুকনো ভাব দূর করতে এটি খুবই উপকারী।

চুলের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা

অ্যালোভেরার উপকারিতা

সকলের পরিচিত একটি উদ্ভিদ অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী। এতে বিভিন্ন  রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা রয়েছে। এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। তো চলুন অ্যালোভেরার উপকারিকা সম্পর্কে জেনে আসি-

১. হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ

হজম শক্তি বৃদ্ধিতে ও কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের ইত্যাদি পেটের সমস্যা সমাধানে অ্যালোভেরা খুবই উপকারী। এ্যালোভেরার অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান যা পাকস্থলী ঠাণ্ডা রাখে এবং গ্যাসের সমস্যা দূর করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে টাটকা অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী পাতার রস ১৫/২০ গ্রামের মতো ঠান্ডা পানির সাথে পরিমাণমতো চিনি মিশিয়ে শরবত করে খেলে উপকার পাবেন।

২. ডায়াবিটিসঃ 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসকরা অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নিয়মিত অ্যালোভেরা রস খাওয়া হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে রাখতে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। এবং নিয়মিত অ্যালোভেরা খেলে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘাটতি দূর হয়ে যাবে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতিও দূর হবে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল এমন উপাদান, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৩. ওজন কমাতেঃ

ওজন কমাতে অ্যালোভেরার জুস বেশ কার্যকরী। অ্যালোভেরায় বিদ্যমান অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান যা শরীরের মেদ দূর করতে সাহায্য করে এবং কোন সাইড ইফেক্ট ছাড়াই। এক গ্লাস পানিতে ৫০ মিলিলিটার অ্যালোভেরা রস, ১ চা চামচ মধু, বিট লবণ ও কাঁচা মরিচ মিশিয়ে শরবত তৈরি করে খান। এতে অনেক উপকার পাবেন।

৪. হার্ট ও দাঁতের যত্নেঃ

হার্টের জন্য অ্যালোভেরা খুবই কার্যকরী। অ্যালোভেরার জুস শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রাখে। এটি দূষিত রক্ত আমাদের দেহ থেকে বের করে দেয় এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। অ্যালোভেরা জুস দাঁত এবং মাড়ির ব্যথা ও ইনফেকশন নিবারণে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি  ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। আবার রক্তে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতাকেও বাড়ায়। যার ফলে দীর্ঘদিন আমাদের হার্ট ভালো থাকে।

৫. শুষ্ক ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা : 

শুষ্ক ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা খুবই উপকারী। অ্যালোভেরাতে রয়েছে হিলিং ও হাইড্রেটিং প্রপার্টি যা শুষ্ক ত্বকের জন্য খুবই প্রয়োজন। অ্যালোভেরার ভেতরের জেল বের করে সরাসরি ত্বকে লাগিয়ে, ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

৬. ঝলমলে ত্বক পেতে অ্যালোভেরা : 

ঝলমলে ত্বক পেতে অ্যালোভেরা খুবই কার্যকরী। রাতে ঘুমানোর পূর্বে মুখ, গলা ও ঘাড়ে অ্যালোভেরা জেলের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে ম্যাসাজ করুন। এবার ২০ মিনিট পর মুখটি ধুয়ে ফেলুন। তারপর মুছে ময়শ্চারাইজার লাগান। এটি সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করুন। কিছু দিনের মধ্যেই ত্বক ঝলমলে হয়ে যাবে।

৭. প্রদাহ কমায় : 

অ্যালোভেরার রস হাড়ের সন্ধিকে সহজ করে এবং দেহে নতুন নতুন কোষ তৈরি করে। এছাড়াও হাড় ও মাংশপেশির জোড়া গুলোকে এটি মজবুত করে। পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ প্রশমনে কাজ করে থাকে।

৮. মেছতা নিরাময়েঃ 

যাদের মেছতার সমস্যা রয়েছে, তারা অ্যালোভেরা পাতার রস পানির সঙ্গে মিশিয়ে খান, দৈনিক ২ বার, প্রত্যেকবার ১০ মিলিলিটার। অ্যালোভেরার ১টি পাতা, মধু ও ছোট শসা মাস্ক করে মেছতার ওপর লাগিয়ে রাখুন। এতে ভালো উপকার পাবেন।

এটি চামড়ার ফুস্কুড়িও প্রতিরোধ করতে পারে। 

৯. অনিয়মিত এবং অস্বাভাবিক মাসিক হলে : 

অ্যালোভেরা পাতার জেলকে ভালোভাবে চটকে চালুনীতে পাতলা আবরণ করে ১ বার শুকানোর পর পুনবারয় তার উপরেই পাতলা আবরণ লাগান। কয়েকবার লাগানোর পরে আমসত্বের মতো তৈরি হবে। এটি মাসিকের সময় ২/৩ গ্রাম পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে নিয়মিত সকালে খালি পেটে খেতে হবে। 

১০. রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : 

অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক ওষুধের কাজ করে থাকে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অপরিসীম। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর জেল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। যারা দীর্ঘকাল ফিব্রো-মিয়া-লজিয়ার মতো সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য অ্যালোভেরার রস খুবই কার্যকরী। এছাড়াও এটি দেহে সাদা ব্লাড সেল গঠন করে থাকে যা ভাইরাসের সাথে লড়াই করে। অ্যালোভেরার রস রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি পিঠের ব্যথাও দূর করতে সহায়ক করে।

১১. দাগ দূর করতে অ্যালোভেরার ভূমিকাঃ

ব্রণের এবং অন্যান্য দাগ দূর করতে অ্যালোভেরা খুবই কার্যকরী। এতে রয়েছ অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটোরি, এস্ট্রিঞ্জেন্ট প্রপার্টি ও খুব উচ্চ পরিমাণে ময়েশ্চার কনটেন্ট যা একত্রে মিলে দাগ দূর করতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও অ্যালোভেরা ত্বকে নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে যারফলে দাগযুক্ত কোষ দূর হয়ে যায়। এবং নতুন দাগহীন কোষ জন্মায়। এক চা চামচ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে ৬ ফোঁটা লেবুর রস মিক্স করুন। এরপর দাগের ওপর লাগান। এভাবে নিয়মিত লাগালে দাগ ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে।

 চুলের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা

অ্যালোভেরা মূলত একটি গাছ, এর পাতাগুলো মোটা। এই পাতার ভেতরে থাকে অ্যালোভেরা জেল। এটি খাওয়া যেমন শরীরের জন্য উপকারী ঠিক তেমনিভাবে ত্বক ও চুলের যত্নে অ্যালোভেরার জেল বা জেল দিয়ে তৈরি মাস্ক খুবই উপকারী। এটি রোদে পোড়া দূর করে। অ্যালোভেরাতে রয়েছে প্রচুর কোলাজেন যা রোদে ক্ষতিগ্রস্ত চুল ও ত্বকের ক্ষতিপূরণ করে। এছাড়াও এটি শুষ্ক ত্বক ও চুলের শুষ্কতা নিয়ন্ত্রণ করে, মুখের বলিরেখা কমায়, চুল মজবুত করে, চুলের খুশকি দূর করে, ত্বক ও চুল ময়শ্চারাইজ করে। নিচে চুলে এ্যালোভেরার উপকারিতা আলোচনা করা হলো-

১.পুষ্টি জোগানো:  

অ্যালোভেরা জেল চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। আর চুলকে সুন্দর ও সিল্কি রাখার জন্য   চুলের সঠিক পুষ্টির প্রয়োজন।  এছাড়াও, এটি মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলকে শক্তিশালী করতে  পারে। এর ফলে চুল সিক্লি ,সুন্দর, চকচকে আর ঝলমলে হয়ে ওঠে।

২. রক্ষাকারী আবরণ তৈরি করেঃ

ধুলাবালি, ধোয়া সহ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির মত প্রকৃতিতে নানা ক্ষতি কারক পদার্থ আছে যা চুলের জন্য ক্ষতিকর। এই সকল পদার্থ  চুলের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। অ্যালোভেরা চুলকে রক্ষা করার জন্য চুলের ওপর একটি রক্ষাকারী আবরণ তৈরি করে এবং পর্যায়ক্রমে চুলকে জলয়োজন ( Hydrated ) করে রাখে। এছাড়াও অ্যালোভেরাতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি প্রপার্টি যেটি রোদে পুড়ে লালচে হয়ে যাওয়া চুলের লালচেভাব কমাতে সাহায্য করে। 

৩. খুশকি দূর করতে অ্যালোভেরা : 

অ্যালোভেরাতে রয়েছে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান। অ্যালোভেরা জেল মাথার তালুতে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। এ ছাড়াও অ্যালোভেরা জেল ও টি ট্রি অয়েল একসাথে মিশিয়ে হেয়ার সেরাম হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

৪. চুল পড়া কমাতে ও কন্ডিশনার হিসেবে অ্যালোভেরা : 

অ্যালোভেরা চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করে এবং চুলের গোড়াকে শক্ত ও মজবুত করে। এটি কন্ডিশনার হিসেবেও দারুণ কাজ করে থাকে। চুলে অ্যালোভেরা জেল লাগালে তা চুলকে ভেতর থেকে কন্ডিশন করে। ফলে চুলের ইলাস্টিসিটি বৃদ্ধি পায় এবং চুল মাঝ থেকে ভেঙে যায় না।

৫. চুল দ্রুত বড় হতে সাহায্য করেঃ

অ্যালোভেরা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল। এগুলো চুলের ফলিকলকে পরিপুষ্ট করে চুল পড়া কমায়। এমনকি চুল দ্রুত বড় হতেও সাহায্য করে।

৬. মাথার তালুর চিকিৎসা করে:

প্রত্যেকেই চায় সুন্দর, লম্বা , উজ্জ্বল , দ্বিপ্তময়  ও প্রাণবন্ত চুল।  চুলের সৌন্দর্য ও চুল কতটুকু লম্বা হবে এবং চুলের স্বাস্থ্য কেমন হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে চুলের গ্রন্থিকোষ বা তালুর (Scalp) উপর। অ্যালোভেরাতে রয়েছে antipruritic প্রপার্টি যা মাথার তালু বা গ্রন্থি কোষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে এবং চিকিৎসা করে মাথার তালুকে সুস্থ করে। যেমনঃ-  চুলকানী, মাথার অনাকাঙ্খিত,জ্বালাতন ইত্যাদির সমাধান দিয়ে থাকে।

 ৭. পিএইচ ব্যালেন্স করেঃ

হাইড্রোজেনের ঋণাত্মক – লগারিদম কে পিএইচ ব্যালেন্স বলা হয়।  মানুষের শরীরে রক্ত, মাথার তালু, সবকিছুতে সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট পরিমাণে পিএইচ থাকতে হয়। এর মাত্রা কম বা বেশি হলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।অ্যালোভেরা মাথার তালুর পিএইচ ব্যালেন্স বজায় রাখে।

চুলের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার

অনেকেই আছেন যারা প্রাকৃতিক উপায়ে নতুন চুল গজানো, চুলকে ঘন এবং খুশকি দূর করা, চুলকে কালো ও মসৃণ করার উপায় খুঁজছেন। তাদের জন্য সহজ এবং কার্যকরী উপায় হচ্ছে অ্যালোভেরার অত্যন্ত কার্যকরী হেয়ার প্যাক গুলো। অ্যালোভেরার জেল সরাসরিই চুলের ঘোড়ায় ব্যবহার করতে পারেন কিংবা অন্যান্য কিছু জিনিসের সাথেও মিলিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। তো বন্ধুরা চলুন দেখে নেয়া যাক চুলে অ্যালোভেরা ব্যবহার করার অত্যন্ত কার্যকরী কিছু হেয়ার প্যাকগুলো।

১. অ্যালোভেরা এবং ক্যাস্টর অয়েল হেয়ার প্যাকঃ

চুলের বৃদ্ধিতে ক্যাস্টর অয়েল খুবই কার্যকরী। অ্যালোভেরা জেলের সাথে একে মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুল দ্রুত বাড়ার সাথে সাথে চুলে কোনো সমস্যা থাকলে সেটাও দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও চুলের গোড়া শক্ত করতে, চুলের আগা ফাটা ইত্যাদি থেকে মুক্তি দিতেও এই হেয়ার প্যাক খুবই কার্যকরী।

ব্যবহারঃ 

একটি পরিষ্কার পাত্রে এক কাপ তাজা অ্যালোভেরা জেল, দুই টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল ও দুই চা চামচ মেথি গুঁড়া নিয়ে ভালো করে একটি পেস্ট তৈরি করুন। রাতে ঘুমানোর আগে হেয়ার ব্রাশ দিয়ে সম্পূর্ণ চুলে এবং মাথার ত্বকে ভালভাবে মাসাজ করে মিশ্রণটি লাগিয়ে নিন। এবার শাওয়ার ক্যাপ অথবা তোয়ালে দিয়ে চুল সমেত মাথা ভালোকরে ঢেকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে উঠে পরিষ্কার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে তারপর শ্যাম্পু করে নিন। এই প্যাকটি সপ্তাহে একবার বা দুবার ব্যবহার করতে পারেনে। 

উপকারীতা:

এটি ব্যবহার করলে বিভিন্ন উপকার পাওয়া যাবে যেমন- 

  • নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।
  • মাথার ত্বক পরিষ্কার এবং দূষণমুক্ত রাখবে।
  • চুলের আগা ফাটা রোধ করবে এবং চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া বন্ধ করবে।

২. অ্যালোভেরা, নারকেল তেল এবং মধুঃ

নতুন চুল গজাতে, ঘন কালো মসৃণ এবং উজ্জ্বল চুলের জন্য এই প্যাকটি অত্যন্ত কার্যকরী।

ব্যবহারঃ 

৫ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল, ৩ টেবিল চামচ নারকেল তেল এবং ২ চামচ মধু নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। তারপর হেয়ার ব্রাশ এর সাহায্যে চুলের গোড়ায় এবং মাখার স্ক্যাল্পে ভালো করে ম্যাসাজ করে মিশ্রণটি লাগিয়ে ফেলুন। এরপর মাথায় শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে ২৫-৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর  ঠান্ডা জলে  চুল এবং মাথার স্ক্যাল্প ভালোকরে ধুয়ে নিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। এই প্যাকটি সপ্তাহে একবার প্রয়োগ করতে পারেন।

উপকারিতাঃ

এই প্যাকটি প্রয়োগ করলে যা উপকারিতা পাবেন-

  • মাথার ত্বকের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং  ছত্রাক ধ্বংস করে ত্বক সুস্থ রাখবে।
  • চুলের গোড়া মজবুত করার পাশাপাশি চুল পড়া বন্ধ করবে।
  • চুল গ্রন্থিতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।

৩. অ্যালোভেরা এবং পেঁয়াজের হেয়ার প্যাকঃ

যাদের মাথার সব চুল পড়ে যাচ্ছে কিন্তু সেই তুলনায় নতুন চুল গজাচ্ছে না, তাদের জন্য এই হেয়ার প্যাকটি খুবই উপকারী। কারণ চুল পড়া বন্ধ করতে নতুন চুল গজাতে এবং  চুলকে ঘন কালো মসৃণ করতে অ্যালোভেরা এবং পেঁয়াজের হেয়ার প্যাক টি অত্যন্ত কার্যকরী।

ব্যবহারঃ

একটি পরিষ্কার পাত্রে এক কাপ পেঁয়াজের রস এবং এক চামচ অ্যালোভেরা জেল ভালোকরে মিক্স করে নিন। এবার চুলের গোড়ায় এবং মাখার স্ক্যাল্পে ভালো করে ম্যাসাজ করে মিশ্রণটি লাগিয়ে ফেলুন। এরপর এক ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে একবার প্রয়োগ যেতে পারে।

উপকারীতাঃ 

  • এই প্যাকটি ব্যবহারের ফলে-দ্রুত সময়ে চুল পড়া বন্ধ হবে।
  • নতুন চুল গজাতে সহায়তা করবে।
  • মাথার ত্বকের খুশকির সমস্যা দূর করবে।
  • চুলের আগা ফাটা বন্ধ করবে।
  • মাথার ত্বকের মৃতকোষ ধ্বংস করবে।
  • মাথার ত্বক সতেজ রাখবে।

৪. অ্যালোভেরা, ডিম এবং অলিভ অয়েলঃ

চুলের গোড়ায় প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগাতে এবং চুল পড়া রোধ করতে এই প্যাকটি অত্যন্ত কার্যকরী।

ব্যবহার:

একটি পরিষ্কার পাত্রে আধাকাপ অ্যালোভেরার জেল একটি ডিমের কুসুম এবং 2 টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিন।এবার সম্পূর্ণ চুলে, চুলের গোড়ায় এবং মাথার স্কাল্পে মিশ্রণটি ভালোভাবে ম্যাসাজ করে লাগিয়ে নিন। এরপর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন।

উপকারিতাঃ

  • ডিমের কুসুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সেটের উপাদান,যা চুলকে গভীর থেকে কন্ডিশন করে তোলে।
  • এটি চুলের গোড়ায় প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগায়
  • চুল পড়া বন্ধ করে।
  • মাথার ত্বক শুকিয়ে গিয়ে চুলকানি হওয়া বন্ধ করে।
  • এবং নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে।

৫. অ্যালোভেরার জেল এবং জবাফুল এর হেয়ার প্যাকঃ

 অতিরিক্ত চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা বেশী হয়ে থাকে শীতকালে। তবে জবাফুল এই সমস্যা খুব সহজেই মুক্তি দিতে পারে। এটি কেবল চুল পড়া ঠেকায় না বরং নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।

ব্যবহারঃ 

একটি পরিষ্কার পাত্রে অ্যালোভেরা জেল ১ চামচ, ২ চা চামচ জবা ফুলের পাপড়ির পেস্ট এবং ১ চা চামচ লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। এবার মিশ্রণটি মাথায় ভালো করে লাগিয়ে আধঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এরপর কোনো শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। 

উপকারিতাঃ

  • শীতকালে দ্রুত সময়ে চুল পড়া বন্ধ করে।
  • নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
  • চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করে।
  • মাথার ত্বক ইনফেকশন থেকে মুক্ত রাখে।
  • এবং চুলকে ঘন,কালো উজ্জ্বল এবং মসৃণ করে তোলে।

অ্যালোভেরা ব্যবহারে সতর্কতাঃ

অ্যালোভেরা নানা ঔষধি গুণসম্পন্ন একটি উদ্ভিদ। এটি সাধারণত ত্বকের জন্য নিরাপদ কিন্তু কারো কারো অ্যালোভেরাতে অ্যালার্জি থাকে। যাদের পেঁয়াজ বা রসুনে অ্যালার্জি থাকে তাদের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরাতে এলার্জি থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রথমবার অ্যালোভেরা ব্যবহার করার পূর্বে প্যাচ টেস্ট করে নেয়া উচিত। কনুইয়ের ভেতরের দিকের অংশে একটু জায়গায় অ্যালোভেরা লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। যদি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা না দেয় তা হলে মুখের ত্বক ও চুলে ব্যবহার করতে পারবেন।

অ্যালোভেরার পাতা কাটার পর পাতা থেকে হলুদ রঙের এক ধরনের তরল বের হয়ে থাকে।আর এই তরলটি চুলকানির সৃষ্টি করে। এটি বের হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। অ্যালোভেরার পাতা কেটে ১ ঘণ্টার মতো রেখে দিন। এবং ১ ঘণ্টা পর হলুদ তরলটি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে দিন।

অ্যালোভেরার অপকারিতা:

প্রত্যেকটা জিনিসরই যেমন উপকারিতা আছে তেমনি এর কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। নিচে  অ্যালোভেরার অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

  •  অতিরিক্ত অ্যালোভেরার জুস গ্রহণ করলে ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে।
  •  লিভার টক্সিসিটি তৈরি হতে পারে।
  •  রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
  •  গর্ভবতী মহিলা এবং বাচ্চাকে দুধ খাওয়ায় এমন মহিলাকে অ্যালোভেরার রস পান করানো থেকে বিরত রাখা উচিত। কেননা এটা শিশু এবং মা উভয়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। 
  •  কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  •  শরীরের ইলেকট্রো-লাইট ভারসাম্যহীন হয়ে যায়।
  •  পাকস্থলীতে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
  •  পাইলস এর সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বা স্বাস্থ্যগত উপকারের জন্য অ্যালোভেরা ব্যবহার করে থাকেন। তবে অ্যালোভেরা কতটুকু গ্রহণ করবেন, এ বিষয়ে চিকিত্‍সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শেষকথা:

অ্যালোভেরা নামক এই ভেষজ মহাঔষধিকে সকলেই চিনি। অ্যালোভেরা আমাদের স্বাস্থ্যের  জন্য যেমন উপ8কারিতা রয়েছে, ঠিক তেমনি এর অপকারিতাও রয়েছে। তাই, যারা এটা নিয়মিত পান করতে চান তারা অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিয়ে পান করা শুরু করবেন। কেননা, এতে ক্ষতিকর উপাদানও রয়েছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url