রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া (বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ)

রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া: দীর্ঘ একটা বছর পর আবারো রহমতের মাস রমজানুল মোবারক ফিরে এসেছে। ৩০ টি রোজা,  তারাবি, সেহরি ও ইফতার এই মাসের প্রধান কাজ। আমরা জানি সকল কাজের শুরুতে নিয়ত হল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে রয়েছে যে, আমলের প্রতিদান নিয়তের উপর নির্ভরশীল। তাই এই মাসের প্রধান আমল বা কাজ গুলোর শুরুতে নিয়ত করতে হবে।

রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া 

এই রমজান মাসের রোজা রাখার জন্য যে নিয়ত এবং ইফতারের পূর্বে ইফতারের দোয়া পড়তে হয়। অনেকেই আরবিতে দোয়া পড়তে চায় আবার অনেকে আরবি না জানার কারণে বাংলায় নিয়ত করে বা দোয়া পরে। নিয়ত হোক বা দোয়া সেটা আরবি তে বলতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই। কেউ আরবিতে বলতে পারলে আরবিতে বলবে কেউ চাইলে নিজের মাতৃভাষায় বলতে পারবে। এতে কোন নিষেধ বা বাধ্য বাধকতা নেই।  

রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া (বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ)

তাই এই আর্টিক্যালের মাধ্যমে আমরা রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া  আরবি ও বাংলায় উচ্চারণ ও অর্থসহ শিখবো। সব গুলো দোয়া জানতে সম্পূর্ণ আর্টিক্যালটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

রোজা রাখার নিয়ত কি

রোজার নিয়ত বলতে সুবহে সাদিক থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যাবতীয় পানাহার, ও রোজার নিষিদ্ধ কাজ সমূহ থেকে বিরত থাকার সংকল্প করা। 

রোজা রাখার নিয়ত আরবি বা বাংলাতে  আপনি যেভাবেই ইচ্ছা করতে পারবেন। রোজা রাখার পূর্বে রোজা রাখার নিয়ত করা আবশ্যক। তবে আপনাকে আরবীতে নিয়ত করতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।  নিয়ত শব্দের অর্থ ইচ্ছে পোষণ করা  তাই আপনি নিজের ভাষায় হোক বা যে কোন ভাষায় হোক ইচ্ছা পোষণ করতে পারেন তাতে কোন সমস্যা নেই। রোজা রাখার নিয়ত সম্পূর্ণ আরবি বাংলা অর্থ সরকারের নিচে বর্ণনা করা হলো।

আরো পড়ুনঃ তারাবির নামাজের নিয়ত,  দোয়া ও মোনাজাত অর্থ সহ 

রোজার নিয়ত করা কি ফরজ

রোজার নিয়ত করা কি ফরজ? এই প্রশ্নটা অনেকেই জানতে চায় তাই তাদের জন্য এই প্রশ্নের উত্তরটা যুক্ত করা হল। 
রোজার নিয়ত করা কি ফরজ?  এই প্রশ্নের উত্তর হলো রোজা রাখার পূর্বে রোজার নিয়ত করা ফরজ। কেউ যদি রোজার নিয়ত না করে রোজা রাখে তাহলে তার রোযা শুদ্ধ বা সঠিক হবে না। তাই সেহরি খাওয়ার পরই রোজার নিয়ত করে নিবেন। প্রত্যেক ভাল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল।আর  আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতিটি আমলের সওয়াব নিয়তের উপর নির্ভর করে প্রদান করে থাকেন।

রোজা রাখার নিয়ত আরবিতে

রোজা রাখার নিয়ত আরবিতে অনেকেই শিখতে চান বা যারা পূর্বে শিখেছিলেন কিন্তু এখন মনে নাই তাদের জন্য আরবি নিয়ত আরবি এবং বাংলা উচ্চারণ সহ যুক্ত করেছি। যার ভাল আরবি পড়তে পারেন তারা সহজেই দোয়াটি পড়ে রোজার নিয়ত করতে পারবেন।

রোজা নিয়ত আরবি

সেহরি খাওয়ার পর রোজার নিয়ত করে নিবেন। রোজা আরবি নিয়ত নিচে দেওয়া হলোঃ

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

রোজা রাখার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ

বাংলা উচ্চারণঃ- নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আংতাস সামিউল আলিম।

রোজা রাখার নিয়ত বাংলায়

রোজা রাখার জন্য নিয়ত করাটা বাধ্যতামূলক। আপনি  রোজার নিয়ত আরবিতে না পারলে বাংলায় বলবেন কোন সমস্যা নেই। নিচে আরবি নিয়তের বাংলা উচ্চারণ প্রদান করা হলো-

বাংলা অর্থঃ- হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল তোমার পক্ষ থেকে পবিত্র রমজানের নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়ত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

আরো পড়ুনঃ রোজা ভঙ্গের কারণ কি কি এবং রোজার মাকরূহ সমূহ 

ইফতারের বিভিন্ন দোয়া সমূহ

ইফতার হল আনন্দের মুহূর্ত, সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থেকে ইফতার সময় যখন পানাহার কারা হয় তখন যেন সারাদিনের কষ্ট আর ক্লান্তি যেন নিমিষেই দূর হয়ে যায়। ইফতার আল্লাহর নিয়ামত। ইফতারের আগে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। তখন বেশি বেশি দোয়া, ইসতেগফার পড়তে হয়।

اَسْتَغْفِرُ اللهَ الْعَظِيْم – اَلَّذِىْ لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ اَلْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْم

উচ্চারণঃ আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহু আল-হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।

ইফতারের দোয়া আরবিতে

সারাদিন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখে সন্ধ্যায়  আল্লাহ তা'আলার প্রশংসার মাধ্যমে ইফতার করা উত্তম। এর জন্য একটি দোয়া রয়েছে তা পড়তে পারেন। নিচে আরবিতে ইফতারের দোয়া দেওয়া হলঃ

اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ وَ اَفْطَرْتُ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِيْمِيْن

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

বাংলায় ইফতারের দোয়া

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্বের মাধ্যমে ইফতার করছি।


বিঃদ্রঃ আমরা রোজার নিয়ত এবং ইফতারের যে দোয়া আমরা পড়ে থাকে তা কুরআন হাদিসে বর্ণিত কোন দোয়া নয়। কুরআন হাদিসে রোজার নিয়ত ও ইফতারের কোন দোয়া পাওয়া যায়না বা বর্ণিত নেই। তবে এই দোয়া গুলো কোন এক  আল্লাহর ওলী এই দোয়া গুলো পড়তেন এবং অন্যদের কে শিক্ষা দেন। যার অর্থ গুলো সুন্দর হওয়ায় সবার মাঝে দোয়া গুলো পরিচিতি লাভ করে। তাই আমরা এই দোয়া কে বাধ্যতামূলক মনে করতে পারবোনা। আপনি চাইলে এই দোয়া পড়তে পারেন আবার অন্য দোয়া বা নিজের থেকে নিজের মত করে নিয়ত বা দোয়া পড়তে পারেন তাতে কোন সমস্যা নেই।

ইফতারের পর আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে এই দোয়া পড়তে হয়

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন-

ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ

উচ্চারণ : ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।’

অর্থ : ‘ (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো ‘ (আবু দাউদ, মিশকাত)

রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া ছবি

ছবিটি সেভ করে মোবাইলে রাখতে পারেন। যখনই প্রয়োজন হবে বের করে পড়তে পারবেন।

রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া (বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ)

নফল রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া

নফল ইবাদত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা নামাজ হোক বা রোজা। কেননা কিয়ামতের দিন ফরজের ঘাটতি গুলো আল্লাহ তায়ালা নফল এর মাধ্যমে পূরণ করবেন। তাই বেশি বেশি নফল রোজা, নামাজ পড়া উচিৎ। অনেকেই মনে করেন যে নফল রোজার নিয়ত, দোয়া হয়তো ভিন্ন। আসলে ভিন্ন কিছু নেই আপনি ফরজের জায়গায় নফল উল্লেখ করলেই হবে। বাংলায় এভাবে বলতে পারেন যে, হে আল্লাহ আমি আগামীকাল নফল রোজার ইচ্ছা পোষণ করলাম। এইটুকুই যথেষ্ট।

আরো পড়ুনঃ

মজাদার আলুর চপ তৈরীর ঘরোয়া রেসিপি 

ইফতারে বিভিন্ন ফলের সরবত তৈরী করুন

ইফতারে খান মজাদার গরুর মাংসের হালিম রেসিপি 

রোজায় গ্যাসট্রিকের সমস্যা দূর করার কার্যকরি উপায় 


শেষ কথা

সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল মোবারক। এই মাসে যত বেশি ইবাদত করা যায় ততই ভাল। কারণ এই মাসের ইবাদত আল্লাহর নিকট খুবই প্রিয় এবং তিনি ইবাদতের সওয়াব ৭০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেন। তাই আমরা চেষ্টা করবো নামাজ রোজা, সেহরি ও ইফতার যথাযথ ও সঠিকভাবে আদায় করা। ধন্যবাদ

আরো পড়ুনঃ সবে বরাতের ফযিলত, করণীয় ও বর্জণীয়

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url