জ্বর হলে করণীয় কি? জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়: জ্বর শব্দটি আমাদের সকলের কাছে খুবই পরিচিত । অসুস্থা বলতে আমরা সর্বপ্রথম জ্বরকেই বুঝে থাকি। কেননা যে কোন রোগের প্রধান লক্ষণ জ্বর এর মাধ্যমে প্রকাশ পায়।  আমরা জানি, আমাদের শরীরের স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি। কিন্তু শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপর চলে গেলেই তাকে জ্বর বলে থাকি।

দ্রুত জ্বর কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়।

বিশেষ করে ঋতু বা আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হয় থাকে। আবার কিছু কিছু জটিল রোগ আছে যার ফলে জ্বর হতে পারে- বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার, টাইফয়েড, মস্তিষ্কের প্রদাহ, একজিমা, রক্তনালির প্রদাহ,  এসএলই, সেলুলাইটিস, আইটিপি ইত্যাদি।

জ্বর হলে করণীয় কি? জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

প্রথমত জ্বরকে কিছু ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে কমানোর চেষ্টা করা উচিত। এতে কাজ না হলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তবে জ্বর ৩৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বা এর নিচে হলে ঔষধ খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং এর পরিবর্তে কিছু ঘরোয়া উপায় মাধ্যমে জ্বরকে কমাতে পারেন।       

 জ্বর এর লক্ষণ 

  • শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি এর বেশী হবে।
  • প্রচন্ড মাথা ব্যথা 
  • ক্ষুদামন্দা এবং শারীরিক ভাবে দুর্বল অনুভব করা।
  • শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা।
  • শীত শীত অনুভূত হওয়া এবং শরীর কাপুনি দেয়া।
  • ঘুম ঘুম ভাব হওয়া।
  • কোন কাজে মনোযোগ দিতে না পারা।
  • শরীর গরম হয়ে ওঠে।
  • চোখ মুখ লাল হয়ে যায়।
  • চোখ জালাপোড়া করা।

জ্বর থেকে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ঃ

জ্বর এর কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি হতে পারে, যেমন-

✳️সংক্রমণ রোগ → ইনফ্লুয়েঞ্জা, HIV,ম্যালেরিয়া,আন্ত্রিক রোগ।

ত্বকে সংক্রমণ।

✳️প্রতিরক্ষাজনিত (Immunological) রোগ → অটোইম্যুন হেপাটাইটিস, সারকয়ডসিস।

✳️ক্যান্সার →বৃক্কে ক্যান্সার,লিউকেমিয়া।

জ্বর কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়

১) মধু খান

জ্বর কমাতে মধু বেশ উপকারী।কেননা মধুতে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা শরীরের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। এর ফলে ভাইরাসজনিত জ্বর কমানো সহজ হবে। এক চা চামচ মধু, অর্ধেকটা লেবুর রস ও এককাপ গরম পানি একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবং এই মিশ্রণ দিনে দুই-তিনবার পান করুন। 

২) তুলসি পাতা খান

তুলসি পাতায় থাকে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান। এটি জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা, পেটব্যথা, অম্বল, গ্যাস, ব্রংকাইটিস, ম্যালেরিয়া এমনকি অনেক রোগের উপশমে সাহায্য করে। ৮-১০টি তুলসি পাতা নিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। অতঃপর একটি পাত্রে পানি গরম হতে দিন এবং এর সঙ্গে তুলসি পাতা দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। এই পানিটি প্রতিদিন সকালে এককাপ করে খান।

৩) কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন।

জ্বর কমানোর আরেকটি ঘরোয়া উপায় হলো কুসুম গরম পানিতে গোসল করা। পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে বেশি গরমও নয় বা ঠান্ডাও নয়। কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কমে যায়। কারণ জ্বর নিয়ে ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গে রক্ত ছুটে যায় ও মূল তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ত্বক ঠান্ডা হয়ে রোগীর কাঁপুনি শুরু হয়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ জ্বর সর্দি কাশির ঔষধের নাম।জ্বরের এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর নাম।

৪) জ্বর কমাতে মাথায় জলপট্টি দিন

জ্বরের তাপমাত্রা যদি বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায়ে অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমানোর অন্যতম পদ্ধতি হলো জলপট্টি দেওয়া। একটি পরিষ্কার রুমাল ভাঁজ করে সেটি পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে নিন। এবার রুমালটিকে কপালে দিয়ে দুই মিনিট রাখুন। দুমিনিট পর রুমালটি আবার পানিতে ভিজিয়ে একইভাবে কপালের উপর দিয়ে রাখুন।এভাবে কয়েকবার করার ফলে দেখা যাবে মাথা দিয়ে যে তাপটা বের হচ্ছিল সেটা রুমাল শোষণ করে বাষ্পে পরিণত হয়ে যাবে এবং শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। 

৫) আদা দিয়ে জ্বরের ঘরোয়া সমাধান

জ্বর কমানোর অন্যতম ঘরোয়া উপায় হলো আদা। আদা হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টি ভাইরাস। যা শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

আধা চা চামচ আদা বাটা ও এক চা চামচ মধু নিন। এরপর এককাপ গরম পানিতে আদা বাটা দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিয়ে এর মধ্যে মধু মেশান। অতঃপর এই মিশ্রণ দিনে তিন-চারবার পান করুন। অথবা এক কাপ ফুটন্ত পানিতে দেড় চা চামচ আদা কুচি মিশিয়ে এটি চায়ের মতো খেতে পারেন। এরফলে আদার সাহায্যেই দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়।

৬) রসুন দিয়ে জ্বরের ঘরোয়া সমাধান

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রসুন। এককোয়া রসুন ও এককাপ গরম পানি নিন। রসুনগুলোকে কুচি কুচি করে নিয়ে গরম পানিতে দশ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপর রসুনের কুচিগুলো ছেঁকে নিয়ে পানিটুকু চায়ের মতো খেয়ে নিন। এভাবে দিনে দুইবার খেতে হবে। 

এছাড়াও দু’কোয়া রসুন ছেঁচে নিয়ে তার সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে মিশ্রণটি পায়ের তালুতে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এরপর পাতলা কোনো কাপড়ে পা দুটো পেঁচিয়ে রাখুন সারারাত। সকালে উঠে দেখবেন জ্বর সম্পূর্ণ সেরে গেছে। তবে গর্ভবর্তী বা শিশুর ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়।

৭) জ্বর কমাতে গ্রিন টির ব্যবহার

 জ্বর কমানোর অন্যতম উপায় হলো গ্রিন টি। গ্রীন টির মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদান। গ্রিন টি শুধু শরীরের ওজনি কমায় না, বরং শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতেও সাহায্য করে। এছাড়াও এটি শরীরের বিভিন্ন কোষ গুলিতে শক্তি সঞ্চয় করে।

যদি শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে গ্রিন টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।তাই জ্বর জ্বর ভাব মনে হলে এক কাপ গ্রিন টি খেয়ে নিন। এতে জ্বর বেড়ে যাওয়ার আগেই শরীর তার প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারবে।

৮) পর্যাপ্ত ঘুম

অসুস্থতা থেকে পরিত্রান পেতে ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা এসময় শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে শরীর আরো দুর্বল হয়ে উঠে। ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, যার ফলে শরীর যদি যথাযথ বিশ্রাম না পায় সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসতে সময় নেবে। 

তাই শরীরকে জ্বরের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রামের প্রয়োজন। 

৯) তরল খাবার খান

রোগীর বিপাকের হার বৃদ্ধি, শরীরের তাপমাত্রাকে স্বাভাবিকে আনা, হজমে ব্যাঘাত না ঘটানো ইত্যাদি বিষয়কে মাথায় রেখে তরল খাবার নির্ধারণ করা হয়। তরল হিসেবে ফলের রস, স্যুপ, লাল চা ইত্যাদি খেতে পারেন। গরম স্যুপ খেলে আমাদের গলা যেরকম আরাম পায় তেমনি শরীরের ভেতর থেকে তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করবে।

১০) জ্বর কমাতে দারচিনির ব্যবহার

দারুচিনিতে আছে অ্যান্টিফাংগাল, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল উপাদান। আর এই দারুচিনিই মাধ্যমেই জ্বর কমানো সম্ভব। দারুচিনির গুঁড়োর সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের বিভিন্ন ভাইরাস জনিত সংক্রমণ কমে যায়। এই মিশ্রণটি দিনে দুই থেকে তিনবার খান। এছাড়াও এটি গলা ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি কাশি, কফের সমস্যা কমাতে সহায়তা করে। অতএব ঘরোয়া পদ্ধতিতে জ্বর কমাতে দারুচিনির গুরুত্ব অতুলনীয়।

জ্বর হলে  ডাক্তারের কাছে কখন যাবেন

জ্বর সবসময় ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে কমানো সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রেই ডাক্তারের কাছে যাবার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন-

  • জ্বর যদি ২-৩ দিনের বেশি স্থায়ী হয়।
  • ৩ মাসের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে যদি 100.4º F এর বেশি জ্বর উঠে ।
  • প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জ্বর ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ওঠলে অথবা তিনদিনের বেশি স্থায়ী হলে।
  • যদি অতিরিক্ত অলসতা বা শ্বাস নিতে সমস্যা হয়।
  • জ্বর হয়ে যদি পানিশূণ্যতা দেখা দেয়। 

শেষ কথাঃ

জ্বর সবসময় এতটা বিপদজ্জন নয়। প্রথমে কিছু ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে জ্বরকে কমানোর চেষ্টা করা উচিত।  আর জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় অবলম্বনের পাশাপাশি রোগীকে নিতে হবে বিশ্রাম, শরীর আর্দ্র রাখতে হবে, তরল ও গরম খাবার খেতে হবে। এতে সুস্থ্য না হলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url