চোখ ওঠা রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার

চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার। চোখ ওঠা সাধারণ একটি রোগ হলেও এর কষ্ট খুবই মারাত্মক। ছোট বড় সবারই এই চোখ ওঠা রোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে।জীবনে একবারও চোখ ওঠেনি এমন মানুষ খুব কমই আছে বলা যায় । চোখ উঠা হলো এক ধরনের ভাইরাস জনিত রোগ। যাকে ইংরেজিতে কনজাংটিভাইটিস (Conjunctivitis) বলা হয়।

চোখ ওঠা রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার

আর এই রোগটা সাধারণত ছোঁয়াচে রোগের মত কেউ তার চোখের দিকে তাকালে বা তার সাথে চলাফেরা করলে তারও চোখ উঠতে পারে। কখনো কখনো পরিবারের একজনের চোখ উঠেছে কিন্তু দেখা যায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ও তার কারণে চোখ উঠেছে।

চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

তবে চোখ উঠলে এতো টেনশন বা ভয়ের কিছু নেই। সাধারণত ওষুধ খেলে ৩-৪ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। আবার ওষুধ না খেলে ও সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে চোখ ওঠা আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়। আমাদের দেশে শীতকালে চোখ ওঠার প্রবণতা খুবই বেশি। এই ঋতুতে প্রায় মানুষেরই চোখ উঠতে দেখা যায়। বর্তমানে চারদিকেই এই চোখ ওঠার প্রবণতা খুবই বেশি। তাই আমাদের উচিত সর্বদা সতর্ক থাকা এবং চোখের নিয়মিত যত্ন নেওয়া।

তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব চোখ ওঠার কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।আপনি যদি চোখ ওঠার সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

চোখ উঠা বা Conjunctivitis কি?

চোখ উঠা বা Conjunctivitis হচ্ছে চোখের একধরনের ভাইরাসজনিত ইনফেকশন। সাধারণভাবে আমরা ‘চোখ ওঠা’ বললেও তা নতুন কোন চোখ উঠা নয় বরং চোখ লাল হওয়া বুঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু চোখ লাল হওয়া  একটি উপসর্গ মাত্র। কারণ চোখ লাল হওয়া বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। এরমধ্যে যেমন, কোন জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে, এডিনো ভাইরাসজনিত কারণে, বা বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসজনিত কারণে ও হতে পারে । তবে চোখ উঠা যাকে বলি তা মূলত ভাইরাস কেরাটাইটিস বা হারপেম সিমপেক্স ভাইরাসজনিত ইনফেকশনই  এর আসল কারণ।

চোখ ওঠার কারণ কি?

চোখ উঠার মূল কারণ হচ্ছে ভাইরাস। বিভিন্ন ভাইরাসের কারণে চোখ উঠার সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে কয়েক কারণ হলঃ
  • বি়ভিন্ন জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে,
  • এডিনো ভাইরাস,
  • স্কেলেরার ইনফেকশন,
  • ভাইরাস কেরাটাইটিস,
  • হারপেম সিমপেক্স ভাইরাস
  • হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস,
  • ইউভিয়াল টিস্যু ইনফেকশন ইত্যাদি
বিভিন্ন কারণে চোখ লাল হতে পারে। ভাইরাস কেরাটাইটিস অথবা হারপেম সিমপেক্স ভাইরাসজনিত ইনফেকশনই মুলত চোখ উঠার ভাইরাসজনিত ইনফেকশন। সাধারণত এ ধরনের ইনফেকশনে প্রথমে এক চোখ আক্রান্ত হয় তারপর অপর চোখে ও এই সমস্যা দেখা দেয় । তা ছাড়া ও ময়লা, ধূলাবালি, ঔষধ, কেমিক্যালস্ অথবা প্রসাধনী ব্যবহারের সময় চোখে কোন কিছু গেলে ও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

চোখ ওঠার লক্ষণ বা উপসর্গ

১. চোখের সাদা অংশ আস্তে আস্তে গোলাপি বা লাল হয়ে যাওয়া।
২. চোখের পাতা হঠাৎ ফুলে যাওয়া।
৩. চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়া।
৪. চোখে ব্যাথা বা জ্বালাপোড়া করা।
৫. চোখে হলুদ, সাদা রঙের ময়লা জমতে দেখা।
৬. ঘুম হতে ওঠার পর চোখ খুলতে না পারা বা চোখের দুই পাতা একসঙ্গে লেগে থাকা।
৭. হালকা জ্বরসহ মাথাব্যথা ইত্যাদি।
৮. চোখ ফুলে যাওয়া ও চোখে প্রচণ্ড রকম অস্বস্তি লাগা।

কীভাবে চোখ উঠার জীবাণু ছড়ায়

চোখ ওঠা সাধারণত একটা ছোঁয়াচে রোগ। আর এটা আক্রান্ত হয় ভাইরাসের কারণে। চোখে ভাইরাস এর কারণে আক্রান্ত হলে চোখের পানিতে ভাইরাস ভেসে বেড়ায়। যখন আমরা এই এই চোখের জল মুছতে যাই, তখনই পানিতে থাকা ভাইরাস আমাদের হাতে এসে যায়। এরপর সেই হাত দিয়েই আমরা যা কিছুই স্পর্শ করি তাতেও ভাইরাস চলে যায়। তারপর অন্য ব্যাক্তি তা স্পর্শ করার মাধ্যমে তার মাঝে ও সেই ভাইরাস চলে যায়। ফলে সেই ব্যাক্তি ও আক্রান্ত হয়।

যেমন কারোর সঙ্গে করমর্দন, টিভি, এয়ারকন্ডিশনার রিমোট, ব্যবহৃত তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, এমনকি হাতের মোবাইল ইত্যাদিতে স্পর্শ করার মাধ্যমে তাতে ও ভাইরাস চলে আসতে পারে। এ জন্যই ডাক্তাররা আক্রান্ত ব্যক্তিকে এই সময় বাসায় আলাদা থাকতে এবং তার ব্যবহৃত গামছা, তোয়ালে অন্য কেউ ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন। তার দৈনন্দিন ব্যবহৃত জিনিসপত্রও সুস্থ হওয়া পর্যন্ত কিছুটা আলাদা রাখা উত্তম।

চোখ উঠার চিকিৎসা 

সাধারণত চোখ উঠলে আপনা আপনি ৭-৮ দিনের মধ্যেই ভাল হয়ে যায়। আর যদি ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ খাওয়া হয় তাহলে হয়তো ৩-৪ দিের মধ্যেই ভাল হয়ে যায়। তাই এর প্রাথমিক চিকিৎসা হল যেসব কারণে চোখ ওঠে, সেসব বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে ।এখানে আরো কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে তা হল:

১. হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে চোখ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে এবং চোখের পাতাগুলো খোলা রাখতে হবে।
২. চোখে সবসময় কালো চশমা দিয়ে রাখতে হবে।
৩. পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম ও ভিটামিনযুক্ত খাবার খেতে হবে।
৪. ব্যক্তিগতভাবে সবসময় নিজে ও আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

চোখ উঠার ড্রপ

চোখ উঠলে নিচের ড্রপ গুলো দিলে দ্রুত চোখ ভাল হবে।

Drop Name → Company →Price

1. Ciprocin → Square → 50 Taka

2. Cipro A → Acme →46 Taka

3. Cipro C → Chemist →30 Taka

4. Supraphen →G.A.Company → 34 Taka

5. Lomeflox →Aristopharma →70 Taka

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

১. যখন আপনার চোখ থেকে ঘন হলুদ কিংবা সবুজাভ হলুদ রঙের ময়লা পদার্থ বা পুঁজ বের হবে।
২. চোখ ব্যথা থাকলে বা সকালে ঘুম থেকে উঠার পর চোখ না খুলতে পারলে।
৩. চোখে ঝাপসা দেখতে পেলে  অথবা দেখতে সমস্যা মনে হলে।
৪. রোদে গেলে কিংবা কোনো অ্যালার্জিক বস্তুর জন্য চোখে সমস্যা দেখা দিলে।
৫. চোখের  সাদা অংশ ফুলে গেলে কিংবা সম্পূর্ণ লাল হয়ে গেলে।
৬. চোখ উঠার সাথে সাথে প্রচন্ড জ্বর, মাথা ব্যাথা থাকলে।
৭. এক সপ্তার মধ্যে রোগীর কোন উন্নতি না হলে।

যা করবেন না 

অযথা চোখ কচবেননা। বার বার চোখে হাত দিবেন না।
কোনো  চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া চোখের ড্রপ ও ওষুধ ব্যবহার করবেন না।

চোখ উঠা রেগের প্রতিকার 

১. চোখ ওঠা একটি ছোঁয়াচে রোগ। পরিবারের  একজনের হলে তার থেকে অন্যজনের ও হতে পারে। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিবারের সকলেনই সতর্ক থাকতে হবে। আক্রান্ত রুগীর কাপড়, তোয়ালে ও অন্যান্য জিনিস অন্য কেউ ব্যবহার করবেন না।
২. বার বার চোখে হাত দেবেন না।
৩. কিছুক্ষণ পর পর সাবান দিয়ে হাত ভালোমতো পরিষ্কার করুন।
৪. যেসব জিনিসে অ্যালার্জিক রয়েছে তা থেকে দূরে থাকুন।
৫. আক্রান্ত হলে অন্যদের সাথে মিশবেন না, ঘরে বিশ্রাম নিন।
৬. ধুলাবালি, আগুন-আলো-রোদে কম যেতে হবে।
৭. চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

চোখ উঠা রোগ প্রতিরোধে করণীয়

চোখ উঠা রোগ থেকে বাঁচতে হলে চোখ উঠা প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। তা হলঃ

১.এক জনের ব্যবহৃত তোয়ালে বা গামছা অন্যজন ব্যবহার না করা।

২.আক্রান্ত চোখ স্পর্শ করলে সাথে সাথে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া।

৩.ডাক্তারের পরামর্শমত চলা ও সঠিক সময় ঔষধ খাওয়া।
৪. বার বার চোখ ঘষা থেকে বিরত থাকা ও চোখে অতিরিক্ত পানির ঝাপসা না দেয়া।
৫.আক্রান্ত চোখে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার না করা।
৬.ধূলা-বালি ও সূর্যের আলো থেকে চোখ রক্ষার জন্য কালো সানগ্লাস ব্যবহার করা
৭.পুকুরে কিংবা নদীতে গোসল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৮.চোখ উঠা ছোঁয়াচে রোগ। তাই পরিবারের অন্যান্যদের থেকে দূরে দূরে থাকা।
৯.বাচ্চাদের চোখ উঠলে হালকা বা কুসুম গরম পানি দিয়ে চোখ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। চোখের পাতা সবসময় খোলা রাখতে হবে। তবে এতে জোর করে চোখ খোলার চেষ্টা করা যাবেনা।

শেষ কথা

চোখ হল সেনসিটিভ একটা অঙ্গ। চোখের যেকোনো সমস্যা হলে বা যে কোন রোগে অবহেলা করবেন না। কারণ সামান্য ভুল বা অসতর্কতার জন্য সারাজীবন আফসোস করা লাগতে পারে।আশা করি চোখ উঠার কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।   উপরের পরামর্শগুরো কেবলই আপনার সচেতনতার জন্য। তাই চোখের যেকোনো সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো তথ্য জানতে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ "পাঁচমিশালী" তে জয়েন করুন এবং আপনার সমস্যা শেয়ার করুন। দ্রুত সমাধান পাবেন। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url