সোনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

সোনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা : সোনাপাতার নাম হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন আবার অনেকেই হয়তো এই প্রথম শুনতেছেন। সোনা পাতা সাধারনত একটি বীরুৎ জাতীয় গাছ।আমাদের দেশে প্রায় জায়গায়ই এই গাছ দেখা যায়।গাছটি আমাদের দেশে একেক জায়গায় একেক নামে পরিচিত। কোন কোন এলাকায় সোনা পাতা, সোনামুখী আরো বিভিন্ন নামে এর পরিচিতি রয়েছে। ইংরেজিতে এই পাতাকে বলা হয় Senna। এর বৈজ্ঞানিক নাম Cassia angustifolia Vahl। 

সোনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

এই পাতা দেখতে অনেকটা মেহেদি পাতার মতো।আমাদেে দেশে এই পাতা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। ঔষধি গুণমান সমৃদ্ধ এই পাতা সবখানে পাওয়া খুবই বিরল। এই পাতার সঠিক ব্যবহারে হাজারো রোগ থেকে নিরাময় পেতে পারেন। এই পাতা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় হিসেবে অনেক আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। 

আমাদের আজকের এই আর্টিক্যালে সোনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। সোনা পাতা সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিক্যালটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সোনা পাতার উপকারিতা

সোনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। অনেকেই আবার ঔষধি পাতা হিসেবে চিনে। সোনা পাতা সেবনের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক । এতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যেমন,   মিনারেল, লবণ, ক্যালসিয়াম ও ফ্লাবিনয়েড নামে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ইত্যাদি । তবে দীর্ঘদিন এই পাতা সেবন না করাই ভাল। চলুন জেনে নেই সোনা পাতার উপকারিতা।

১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে

যারা দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগছেন তারা এর থেকে মুক্তি পেতে সোনা পাতা দিয়ে তৈরি চা খেতে পারেন। অনেক ডাক্তার সার্জারি করার আগে পেট খালি করার জন্য সোনা পাতার চা খেতে বলেন । এর মধ্যে স্টিমুল্যান্ট ল্যাক্সোটিভ উপাদান রয়েছে , যা পেট পরিষ্কার রাখতে দারুনভাবে কাজ করতে পারে। সোনাপাতার ব্যবহারে অন্ত্রের গতিবিধি উন্নত হয়। ফলে খাবার দ্রুত হজম হয় এবং মল সহজে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।

২. ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম

মলত্যাগের অনিশ্চিত সমস্যা দূর করতে সোনা পাতা বেশ কার্যকরি। মলত্যাগের অনিশ্চিত সমস্যাকে বলা হয় ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম। এই সমস্যা মারাত্মক কিছু নয়, তবে বেশ ভোগান্তি পেতে হয়। একটি গবেষণায় দেখা যায়, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) এর জন্য সোনা পাতার ব্যবহার ভাল কাজ করে। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের পাশাপাশি অন্ত্রের ব্যথা, পেট ফাঁপা,ডায়ারিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো নানা অন্ত্র সম্পর্কিত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করে। 

৩. ওজন কমাতে

আপনর ওজন যদি অতিরিক্ত বেড়ে যায় তাহলে ওজন কমানোর জন্য সোনা পাতা ব্যবহার করতে পারোন। এনসিবিআইয়ের (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজিক ইনফরমেশন) ওয়েবসাইটে ওজন কমার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, সোনা পাতা থেকে তৈরি ভেষজ চা দৈনিক সেবনে ওজন কমাতে সাহায্য করে। সোনা পাতায় বিদ্যমান সক্রিয় উপাদান অ্যানথ্রাকুইনোন ডেরাইভেটিভস এবং গ্লুকোসাইড ওজন কমানোর জন্য সহায়ক বলে মনে করা হয় । ওজন কমানোর জন্য দীর্ঘদিন খেয়ে যাবেন এবং নিয়মিত খাবেন। পাশাপাশি ওজন কমাতে সুষম ডায়েট এবং নিয়মিত ব্যায়াম করাও জরুরি।

৪. সংক্রমণ থেকে মুক্তি

ব্যাক্টেরিয়া এবং ছত্রাকের যে কোন সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে সোনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন।এক গবেষণায় বলা হয়, সোনা পাতার অর্কে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এটি অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ব্যাক্টেরিয়া এবং ছত্রাকের যে কোন সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করবে। সোনা পাতা গনোরিয়া (যৌনবাহিত রোগ), নিউমোনিয়া, মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং মাইকোটিক সংক্রমণ ইত্যাদি সংক্রমণ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।

৫. চুলের জন্য

যাদের চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে তারা সোনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। সোনা পাতা ব্যবহার করলে চুল গোড়া থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠে ফলে কন্ডিশনিং করতে এবং চুল পড়া রোধ করতে চমৎকার কাজ করে। সোনা পাতা ভাল করে ধৌত করে তারপর ভাল করে পিষে, এসেনসিয়াল অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে পারেন।তারপর সম্পূর্ণ মাথায় লাগাতে পারেন। মিশ্রণটি আধা ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন।

সোনা পাতা খাওয়ার নিয়ম

সোনা পাতার ব্যবহার যদি না জেনে থাকেন তাহলে জেনে নিন কখন কি পরিমাণে ব্যবহার করবেন এবং খাবেন।

  • সোনা পাতা ভাল করে শুকিয়ে অথবা গুঁড়ো করে হার্বাল চায়ের মতো সকাল বা বিকেলে পান করতে পারেন।
  • যে কোন সবজি রান্না করার সময় কয়েকটি সোনা পাতা সবজির সাথে মিশিয়ে রান্না করে খেতে পারেন।
  • বাজারে সোনা পাতা দিয়ে তৈরি সিরাপ এবং ক্যাপসুলও পাওয়া যায় তা খেতে পারেন।

সোনা পাতা কতটুকু খাবেন 

কিছু কিছু সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সোনা পাতা এবং এর থেকে তৈরি উপাদানগুলি ব্যবহার বা খেতে পারেন।  নীচে তা উল্লেখ করা হল।

  • ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন ২ মিলিগ্রাম সোনা পাতা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চা বানিয়ে খাবেন বা চায়ের সাথে মিশিয়ে খাবেন।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সোনাপাতার ক্যাপসুল খেতে পারেন। অথবা ঔষধের সাথে ১০ মিলিগ্রাম থেকে ৬০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত সোনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। ১০ দিন পর্যন্ত নিয়মিত ব্যবহার করুন তাহলে অনেক উপকার পাবেন।

দ্রষ্টব্য : সোনা পাতাগুলিতে ল্যাক্সেটিভ উপাদান রয়েছে, তাই ঠিক কতটা পরিমাণ গ্রহণ করলে আপনার জন্য ভাল হবে সে বিষয়ে সঠিক মতামত জানতে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে তারপর খেতে পারেন।

সোনা পাতার গাছ 

সোনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

সোনা পাতা খাওয়ার অপকারিতা

সোনা পাতার বেশ উপকারিতা রয়েছে। তবে নিয়মিত দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।

হজমের সমস্যা : 

দীর্ঘদিন যাবত প্রচুর পরিমাণে সোনা পাতা খাওয়ার ফলে এতে বিদ্যমান ল্যাক্সেটিভের কারণে কখনো কখনো হজমজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ইলেক্ট্রোলাইটের সমস্যা : 

সোনা পাতার অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শরীরে পটাসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। যা ইলেক্ট্রোলাইটকে প্রভাবিত করে ফলে তাতে সমস্যা হতে পারে।

ডিহাইড্রেশন : 

বেশ কিছু মানুষ রয়েছে যারা ডিহাইড্রেশনে ভুগে থাকেন। তারা সোনা পাতার চা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় এর কারণে রোগীর ডায়ারিয়া হতে পারে।

তাছাড়াও আরো রয়েছে : 

যারা পেটে ব্যথা, অন্ত্রের ব্যথা, ক্রোন রোগ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, অ্যাপেন্ডিক্স, পেটে ফোলাভাব এবং অর্শ্বরোগ ইত্যাদি রোগে ভোগছেন তারা সোনা পাতা ব্যবহার না করাই ভাল।

শেষ কথা

সোনাপাতার উপকারিতা অনেক। তবে কিছু অপকারিতা ও আছে। ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। সোনা পাতা দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহার করা বা খাওয়া ঠিক হবে না। তবে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে সোনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url