দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা। দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম

দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা। দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম: আমাদের দেশে সব  চাইতে পরিচিত এবং ছোয়াচে রোগ হলো দাদ রোগ  যা  চর্মরোগ নামে ও সবার  কাছে পরিচিত । এই  রোগটি সাধারণত ছোঁয়াচে হয়ে থাকে যার সৃষ্টি  হয়ে থাকে মুলত ছত্রাক এবং  ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ফলে ।  মানুষের শরীরের যেকোন অঙ্গে  এই দাদা রোগটি হতে পারে। এটি  মানুষের  শরীরে মাথা থেকে  শুরু করে পা পর্যন্ত হতে পারে বলে মনে করা যায়।  তবে এই রোগ হলে ঘাবড়ানো কোন কারন নেই  ।  সঠিক  ভাবে চিকিৎসা করলে এই রোগ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ ।

দাদ বা দাউদ কি?

দাদ হল Dermatophytosis জাতীয় ফাংগাসের সংক্রমনের কারণে হওয়া রোগকে দাদ বা দাউদ বলা হয়। ইংরেজিতে এই রোগকে রিং ওয়ার্ম বলে থাকে। এটা মূলত ফাংগাস শরীরের বিভিন্ন জায়গা বা ত্বকের ভেতর বাসা বাধে এবং সেখানে বসবাস ও খাদ্য গ্রহণ করে থাকে।  যার ফলে ওই স্থানে দাদ রোগের সংক্রমন দেখা দেয়।  Dermatophytosis এর মোট ৪০ টি প্রজাতির ফাংগাস দ্বারা দাদ রোগের সংক্রমন হতে পারে।

দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা। দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম

দাদ কেন হয়?

এই দাদ রোগ হওয়ার সাধারনত মূল কারণ হল,  অপরিষ্কার ও স্যাতস্যাতে পরিবেশে বসবাস বা ব্যাক্তিগত অপরিস্কার ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে দাদ রোগটির সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। রোগটি অত্যন্ত সংক্রমক বা ছোঁয়াচে রোগ হবার কারণে আক্রান্ত ব্যাক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংষ্পর্শের কারণে আশেপাশের মানুষ ও আক্রান্ত হতে পারে।

দাদ রোগের লক্ষণ

ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ হলো দাদ রোগের প্রধান লক্ষণ। সাধারণত এই দাদ রোগটি দেখতে একদম আঙুলে পরার গোল  আংটির মতো দেখতে  হয়ে থাকে । যার রঙ সাধারণত লালচে হয়ে থাকে। তবে মানুষের শরীরের রঙ অনুযাই এই  রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির  কখনো কখনো  লালচে বা রূপালি রঙের হয়ে থাকে।
আবার অনেক সময় শরীরের  যেকোনো জায়গায় খুব বেশি  গাঢ় বর্ণও দেখা যেতে পারে।

এই রোগ হলে  মানুষের   শরীরের  রঙ কিছুটা  পরিবর্তন হতে পারে, এবং এরি সাথে  দাদ হওয়ার স্থানের উপরের অংশে  ছোটো ছোটো আঁইশের মতো দেখা যায়। তা ছাড়াও আক্রান্ত স্থানে নিচের কয়েকটি লক্ষণ দেখা দিতে পারে:-

  • মানুষের শরীরের ত্বক অনেকটা শুকিয়ে যাওয়ার মতো বা চামড়া  খসখসে হয়ে যাওয়া।
  • যে স্থানে দাদ হয়েছে সে স্থানটি  ফুলে যায়।
  •   দাদ হওয়ার অংশটিতে অনেক চুলকায়।
  • দাদ হওয়া স্থানে যদি কোনো চুল বা পশম থাকে তাহলে সেটি পরে যাওয়া।

শরীরের কোন কোন স্থানে দাদ রোগ হয়?

মানুষের শরীরে যেকোনো স্থানে দাদ হতে পারে । ধরেন যেমন:  পায়ের হাটুর চিপায়, গলায়, হাতের  ত্বক, আঙুলের চিপায় , কাধে এছাড়া ও পিঠে ও হতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায় যে, দাদ হওয়ার জায়গায়
এবং নানা রকম কারনে এই রোগের লক্ষণের ও অনেক রকম হতে পারে । যেমন,  দাদ বা র‍্যাশের আকারে ও অনেকটা আলাদা হতে পারে। এই   র‍্যাশ  বা দাদ গুলো আস্তে আস্তে  অনেকটা বড় আকার ধারন করতে পারে এবং তা ছড়িয়ে যেতে পারে মনে করা যায়। তাছাড়া ও এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় এই দাদ ছড়িয়ে যেতে পারে।

আমরা আগেই বলেছি যে, মানুষের শরীরের যেকোনো জায়গায় দাদ এর মতো ছোয়াচে রোগ হতে পারে।তাই শরীরের বিশেষ  বিভিন্ন অঙ্গে এই রোগ হয়ে থাকে বলে ধারনা করা হয়েছে। তবে আসুন যেনে নেওয়া যাক কোন কোন স্থানে দাদ এর মতো ছোয়াচে রোগ হয়ে থাকে।

মাথার ত্বক

অনেক সময় দেখা যায় যে, আমাদের  প্রচুর পরিমানের চুল পরতে থাকে। এই সময় অনেকেই মনে করি খুশকির কারনে চুল পড়ছে। তাই বেশি খেয়াল করি না এই ব্যাপারে। চুল কিন্তু শুধু মাত্র খুশকির জন্য পরে না। অনেক সময় মাথার ত্বকে দাদ হলে চুল পরা শুরু করে । মাথার  চুল পড়া   অংশে  অনেক সময় দেখা  যায় যে, অনেকচা লাল হয়ে গেছে। আবার কখনো কখনো  চুল পড়া অংশের আশে পাশে  গোলের মতো বৃত্ত  হয়ে  আছে।   এই লক্ষণ গুলো হলো দাদ এর। এতে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে  চুলকানি হতে পারে।আর যদি এর মাত্র খুব বেশি পরিমানের হতে থাকে,তবে দাদ এর আশে পাশে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে, এবং এতে আর বেশি চুল পড়ার আশংখা হতে পারে বলে মনে করা যায়।

তবে মনে রাখতে হবে দাদ কিন্তু বড়দের তুলনায় ছোটদের বেশি দেখা যায়। তাই মাথার ত্বক ও চুল  ভালো ভাবে পরিস্কার রাখতে হবে প্রতিদিন।

পা ও পায়ের আংগুলের ফাঁকে

পা ও পায়ের আঙুলের ফাকে বিভিন্ন কারনে লাল হয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায় যে, বেশি পানি লাগার কারনে এইসব স্থানে লালচে হয়ে আছে। কিন্তু দাদ হলে বুঝা যায় যে, লালচে তো হয় স্বাভাবিক  তার সাথে লালচে স্থানে ফুলে যায় এর সাথে সাথে ওই জায়গাটা থেকে চামড়া উঠতে শুরু করে।  এই সময় দাদ হওয়া স্থানে খুব বেশি চুলকানি অনুভব হয় ফাঁকে চুলকানি হয়।
এই দাদ কিন্তু এক স্থানে হয় না।আকান্ত  স্থানে হতে হতে পায়ের আশে পাশে ও ছড়িয়ে যায়।অধিক পরিমানে চুলকানের ফলে দাদ হওয়া জায়গাতে ফোস্কা ও পরতে পারে। তাই বেশি দেরি না করে ডাক্তারের  কাছে যেতে হবে।

কুঁচকি

মাঝে মধ্যে দেখা যায় যে,   পায়ের ফাকে বা কুঁচকিতে দাদ  হয়। আর এই সময়  দাদ হওয়া স্থানে লালচে হয়ে থাকে। লালচে হওয়ার সাথে সাথে র‍্যাশের মতো হয় এবং সে স্থানে  চুলকানি হয়

দাঁড়ি

অনেক সময় দেখা যায় যে, ছেলেদের গালে,  দাড়িতে  অনেক অংশে। এমন দাদ হয়
তাদের দাড়ির এক অংশে গোল হয়ে থাকে। এছাড়া  গালে ,  গলার নিচে এবং গলার আশে পাশে দাদ হয়। এই সব অংশে লালচে হয়ে যায়। অনেক সময় চুলকানি হয়। চুলকানি হওয়ার কারন হলো এর  মধ্যে  আঁইশ থাকে ।

দাদের স্থানে  পেকে তার মধ্যে ইনফেকশন হয়ে  পুঁজ হতে পারে।মাঝে মধ্যে চুল পড়া শুরু করে।

দাদ রোগ কীভাবে ছড়ায়?

দাদ একটি  ছোয়াচে বা সংক্রামক রোগ।  এক স্থান থেকে  অন্য স্থানে এটি ছড়িয়ে পরে। সাধারণত ফাঙ্গাস  জাতীয় জীবানুর মাধ্যমে এই দাদা  ছড়ায়।   ট্রাইকোফাইটন, মাইক্রোস্পোরাম এবং এপিডার্মোফাইটন এই তিন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে । এটি মূলত তিনভাবে ছড়ায়—

১।  দাদ যেহেতু ছোয়াচে রোগ তাই এই রোগ যে ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছে তার ব্যবহার করা যেকোনো কিছু  স্পর্শ  করলে তা অন্য কারো হতে পারে। যেমন: গামছা, তার পরা কাপড়-চোপর , ইত্যাদি

২। এছাড়া ও দাদ  রোগে আক্রান্ত  হয়েছে এমন প্রাণীর স্পর্শ থেকে ও হতে পারে। যেমন: বিড়াল,  ছাগল, মহিষ, গরু, হাতি ও  ঘোড়া। ইত্যাদি।

৩। এই রোগের জীবানু আছে এমন  স্থান হতে ও হতে পারে। যেমন, স্যাঁতস্যাঁতে কোন জায়গা হতে।

দাদ রোগের চিকিৎসা

এই দাদ  বা ছোঁয়াচে রোগের একমাত্র  চিকিৎসায়   শুরু মাত্র অ্যান্টিফাঙ্গাল ঔষধ ব্যবহার করা হয়।  এক্ষেত্রে এর চিকিৎসা অনেকটা নির্ভর করে এই রোগটা কতো টুকু হয়েছে,এবং এর ইনফেকশনের উপর।

এই সময় খেয়াল রাখতে হবে যে এই রোগের ঔষুধ ঠিক মতো সেবন করা এবং আশে পাশের মানুষের যেন না হয় তার দিকে লক্ষ্য রাখা।

দাদ রোগের ঔষধ

মানুষের শরীরের এই  দাদ  বা ছোঁয়াচে  রোগের  চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ঔষধগুলো বিভিন্ন ভাবে পাওয়া যায়।  যেমন: ক্রিম, জেল, লোশন, স্প্রে, পাউডার, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল।

মানুষের শরীরের এই  দাদ বা  ছোঁয়াচে  রোগের ঔষুধ  পানি দিয়ে না খাওয়া থেকে যেসকল ঔষধ সরাসরি  শরীরের ত্বকে লাগানো যায় তা ব্যবহার করাই হল সব থেকে ভাল । তাই জেল  ক্রিম, স্প্রে , লোশন অথবা  পাউডার দাদ হওয়া স্থানে লাগাতে পারেন। এতে করে খুব তারাতাড়ি ফল পাওয়া যাবে। জেল, লোশন ক্রিম এই সব ঔষধের মধ্যে আছে  ক্লট্রিমাজোল, মাইকোনাজোল, টার্বিনাফিন ও কিটোকোনাজল।  সাধারণত এই গুলো  ৩–৫  সপ্তাহ প্রতিনিয়ত  ব্যবহার করতে হয়। একটানা ব্যবহারের ফলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।

যেসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ

আমাদের অবশ্যই দাদ হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।।  আর তাই যেসব কারনে আমরা ডাক্তারের কাছে  যেতে হবে তা নিম্নরূপ:

ডাক্তারের পরামর্শ  মতো ত্বকে  দাদ হলে যে ঔষুধ খাবো যেমন অ্যান্টিফাঙ্গাল ঔষধ এটি  খাওয়ার  পর যদি রোগটি না কমে তাহলে।

অনেক সময় দেখা যায় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তাই যদি কোনো কারণবশত রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা একবারে কমে যায় তখন । যেমন:  ক্যান্সারের রোগিকে কেমোথেরাপি দেওয়ার সময়,অথবা স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ  ব্যবহার  করার সময় এবং ডায়াবেটিস এর ও ক্ষেত্রে।

যদি কারো মাথায় এই দাদ হয় তাহলে অবশ্যই  ডাক্তারের  কাছে যেতে হবে এবং সেই পরামর্শ অনুযায়ী ঠিক মতো ঔষুধ সেবন করতে হবে। এর সাথে অবশ্যই ভালো মানের   শ্যাম্পু  দিয়ে চুল ভালো ভাবে পরিস্কার করতে হবে।

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম

দাদ হলে বিভিন্ন উপায়ে তা সারানোর চেষ্টা করবেন। প্রথমে ঘরোয়া উপায় গুলো ফলো করবেন যদি না ভাল হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ খেতে হবে। তবে ঔষধ খাওয়া থেকে ঔষধ ব্যবহার ভাল কাজ করে।   তাই দাদ চুলকানি দূর করার ভাল কয়েকটি ক্রিম এর নাম উল্লেখ করছি যা ব্যবহার করলে দ্রুত দাদ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

  1. Pevisone → 70 Taka
  2. Avison → 55 Taka
  3. Fungidal HC → 55 Taka
  4. Fungison → 45 Taka
  5. Pevisia →34 Taka

দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

দাদ রোগের সংক্রমন দেখা দিলে প্রথমে চেষ্টা করবেন ঘরোয়া উপায়ে দাদ দূর করার। যদি ব্যবহারের পর কোন পরিবর্তন না হয় বা আরো বাড়তেছে মনে হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে। নিচে কয়েকটি ঘরোয়া উপায় উল্লেখ করা হল:

নিম পাতা

দাদ দূর করতে নিমপাতা খুবই পরিচিত এবং বেশ কার্যকরি। নিমের মধ্যে আছে এন্টিফাঙ্গাল উপাদান যা দাদ সারাতে বেশ কার্যকরি। তাই নিম পাতা বেটে দাদে লাগাতে পারেন প্রতিদিন। আশা করি দ্রুত ভাল হয়ে যাবে।

হলুদ

হলুদে আছে অনেক ধরনের উপকারিতা যা বলে শেষ করা যাবেনা। হলুদে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দাদ রেগ দূর করতে ভাল কাজ করে। এর জন্য আপনাকে কাঁচা হলুদ বেটে অথবা হলুদের গুঁড়া নিয়ে হালকা পানি দিয়ে পেস্ট বানিয়ে তাতে লাগিয়ে রাখুন।  আশা করি দ্রুত কমে যাবে।

অ্যালোভেরা

অ্যালোভ্যারা শুধু ত্বক নয় পাশাপাশি আরো বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরি ভূমিকা রাখে।অ্যালোভেরাতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দাদের মত রোগ সারাতে চমৎকার কাজ করে। তাই দাদে সংক্রমন স্থানে অ্যালোভেরার জেল লাগাতে পারেন। দিনে ২-৩ বার লাগালে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।

নারকেল তেল

নারকেল তেলে মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যা দাদ সংক্রমন দূর করতে দ্রুত কাজ করে। তাই নারকেল তেল নিয়ে হালকা গরম করে তা সংক্রমন স্থানে লাগান। দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করবোন। এতে ভাল উপকার পাবেন।

শেষ কথা

দাদ রোগ হলে সর্বাবস্থায় সতর্ক থাকা উচিত। কারণ,  এটা ছোঁয়াচে একটি রোগ।  তাই এই রোগ হতে দেখলে আগে থেকেই দ্রুত চিকিৎসা করানো উচিত। অন্যথায় তা বেড়ে গেলে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url