কান ব্যাথা দূর করার উপায়।কানের ব্যাথার ঔষধের নাম বাংলাদেশ

কান ব্যাথা দূর করার উপায়: কানের সমস্যা হয়না এমন মানুষ খুব কম-ই আছে। বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবারই কোন না কোন সময় কানের সমস্যা দেখা দেয়। বাচ্চাদের এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। কানে ব্যথা বর্তমানে খুব কমন একটা সমস্যা।  সাময়িকভাবে খুবই কষ্টকর হলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি কোনো গুরুতর রোগের লক্ষণ নয়।

কান ব্যাথা দূর করার উপায়।কানের ব্যাথার ঔষধের নাম বাংলাদেশ

তবে কখনো মারাত্মক আকার ধারণ করে। কানে পুঁজ, কম শোনা থেকে শুরু করে ইনফেকশন হয়ে কখনো অপারেশন পর্যন্ত করতে হয়। তাই অবহেলা করা উচিৎ নয় । সময়মত সঠিক চিকিৎসা নিলে কানে ব্যথা থেকে দ্রুত প্রতিকার পাওয়া যায়। 

কানের ব্যাথা দূর করার উপায়

তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো কানের ব্যাথা নিয়ে। কানের ব্যাথার কারণ, প্রতিকার করণীয় ও তার ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই কানের ব্যাথা সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিক্যালটি বিস্তারিত পড়ুন।

কানে ব্যথার কারণ

বিভিন্ন কারণে কানের ব্যাথা হতে পারে। কখনো অন্য কোন সমস্যার কারণে ও কানের ব্যাথা হতে পারে। বিভিন্ন কারণে ব্যথার স্থায়িত্ব একেক রকম বা একেক ধরনের হয়ে থাকে। তাই  নিচে কানে ব্যথার খুব পরিচিত কিছু ধরন ও সেসবের সম্ভাব্য কারণগুলো ও নিচে উল্লেখ করা হলো—

যেসব সমস্যার কারণে কানের ব্যাথা হয় 

১/ দাঁতে ব্যথা অনুভুত হওয়া।

কারণঃ

  • শিশুদের নতুন দাঁত ওঠা,
  • দাঁত ও দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের জন্য ফোঁড়া হওয়া।

২/ কানে শুনতে সমস্যা হওয়া।

কারণঃ

  • গ্লু ইয়ার বা কানে পানি জমে থাকলে।
  • কানে খইল বা ময়লা তৈরি হয়ে জমে থাকলে।
  • কানের ভেতরে কিছু গেলে বা  আটকে গেলে । যেমন: শিশু ছোট কোনো খেলনা, বাদাম,  মটরশুঁটি অথবা  এজাতীয় কোন কিছু কানে ঢুকিয়ে ফেললে যদি তা আটকে যায়।
  • কানের পর্দা ছিদ্র হওয়া।

৩/ খাবার গিলার সময় কানে ব্যথা অনুভুত হওয়া। 

কারণঃ

  • গলা ব্যথা
  • টনসিলের ইনফেকশন
  • টনসিলের বিভিন্ন জটিলতার কারণে । যেমন: টনসিলের চারপাশে ফুলে যাওয়া ও গুরুতর ইনফেকশন থেকে ফোঁড়া হওয়া।

৪/ জ্বর আসা।

কারণঃ
  • কানের ইনফেকশন।
  • সর্দি-কাশি ও ফ্লু।

শিশুদের কানে ব্যথা হলে কিভাবে বুঝবেন

বাচ্চাদের কানের সমস্যা  প্রায়ই দেখা যায়। যেহেতু
বাচ্চারা কথা বলতে পারেনা তাই কিভাবে বুঝবেন যে তাদের কানে ব্যাথা হচ্ছে। শিশু ও ছোটো বাচ্চাদের এক কানে অথবা একই সাথে দুই কানে ব্যথা দেখা যায়। বিভিন্ন কারণে ও শিশুর কানে ব্যাথা হয় তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইনফেকশনের জন্য ব্যথা দেখা দেয় । শিশুর কানে ব্যথা হচ্ছে কি না তা বোঝার জন্য নিছে কয়েকটি উপায় উল্লেখ করা হলো—

  • বাচ্চারা বার বার কান ঘষলে বা টানলে।
  • আওয়াজে বা ডাকলে সাড়া না দিলে।
  • শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে  ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হলে।
  • মেজাজ খিটখিটে কিংবা খুব অস্থিরতা দেখালে।
  • খাবার খেতে না চাইলে এবং কান্না করলে।
  • শরীরের ভারসাম্য ঠিক না থাকলে।

কানের খইল বা ময়লা তৈরি হলে করণীয়

কানে একধরনের ময়লা জমে সেটাকে আমরা ময়লা বা খইল বলে থাকি। ইংরেজিতে খইলকে  ইয়ার ওয়াক্স বলা হয়। কানে খইল হওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়।

সাধারণভাবে আমরা কানে তৈরি হওয়া খইলকে ময়লা ভাবলে ও এটা আমাদের কানের জন্য উপকারি। কেননা  এটি কানের ভেতরের পরিবেশকে জীবাণু থেকে সুরক্ষা দেয় এবং বাহির থেকে ভিতরে কোন ময়লা যেতে ও বাধা দেয় । এটি সাধারণত নিজে থেকেই কানে তৈরি হয় এবং নিজে থেকেই নিয়মিতভাবে বেরিয়ে আসে।

তবে সমস্যা  হল যদি সেই খইল কানে জমে শক্ত হয়ে আটকে থাকে তাহলে এর জন্য বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যদি এমন সমস্যা হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি এবং পাতলা পায়খানার ট্যাবলেটের নাম

কানে খইল আটকে থাকলে যে সমস্যা গুলো দেখা দেয় তা হলো—

  • কানে কম শোনা।
  • কানে ব্যথা অনুভব হওয়া এবং কান বন্ধ হয়ে আছে মনে হওয়া।
  • বাইরে কোনো শব্দ নাই কিন্তু কানের ভেতরে কেমন যেন শব্দ হচ্ছে বলে মনে হওয়া।
  • মাথা ঘুরানো, কখনো কখনো শরীরের ব্যালেন্স বা ভার্সাম্য হারিয়ে ফেলা।
  • বমি বমি ভাব হওয়া।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: কখনো আঙুল ও অন্য কোনো বস্তু যেমন, কটন বাড,কাটি বা এ জাতীয় কোন কিছু দিয়ে কখনোই কানের ময়লা বা খইল বের করার বা পরিস্কার করার চেষ্টা করবেন না। কারণ এতে অনেক সময ময়লা উল্টো কানের ভেতরে ঢুকে যায়। ফলে অনেক সময় কানের ভিতরে আটকে যেতে পারে এবং খইলের সমস্যা আরও বেড়ে গিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে । তাই এই অভ্যাসটি এখনি ত্যাগ করতে হবে।

যদি কানে অতিরিক্ত খইল জমে তাহলে তা বের করার জন্য মেডিকেল গ্রেড অলিভ ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন ।এই তেল ব্যবহারে জমে থাকা বা শক্ত হয়ে থাকা খইল সহজে নরম করে দেয়। ফলে কানের ময়লা বা খইল আপনা-আপনি কান থেকে বেরিয়ে আসে।

আরো পড়ুনঃ কোমর ব্যাথার কারণ, প্রতিকার ও কোমর বা মাজা ব্যাথার ট্যাবলেটের নাম

কানের ব্যাথার ঔষধের নাম

১। কানে যদি তীব্র ব্যাথা থাকে তাহরে DICLOFENAC SODIUM যুক্ত ঔষধ খেতে পারেন।
যেমনঃ-

  • clofenac-50/100mg
  • a-fenac-sr-50/100mg
  • voltalin-sr-50/100mg.

খাওয়ার নিয়মঃ

প্রতিদিন ১+০+১ করে খাওয়ার পর অর্থাৎ ভরা পেটে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেব্য।

২। কানের ভেতরকার ইনফেকশন কাটানোর জন্য ERYTHROMYCIN যুক্ত ঔষধ খেতে পারেন।

যেমনঃ Tablets—

  • erocin-500mg,
  • erythrox-500mg

খাওয়ার নিয়মঃ-

প্রতিদিন  ১+০+১ করে ভরা পেটে,৭ দিন খাবেন।
                 অথবা,
CIPROFLOXACIN  যুক্ত ঔষধ খেতে পারেন।
যেমনঃ-

  • ciprocin-250/500mg,
  • cipro-a-250/500mg.
খাওয়ার নিয়মঃ-

১+০+১ করে ভরা পেটে,৭ দিন খাবেন।

৩। আমরা জানি, ব্যাথার ঔষধ পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে।এজন্য OMEPRAZOL যুক্ত ট্যাবলেট খেতে পারেন ।
যেমনঃ -

  • seclo-20/40mg
  • ppi-20/40mg.
খাওয়ার নিয়মঃ-

প্রতিদিন ১+০+১ করে খাওয়ার ২০মিনিট আগে কাবেন। ব্যাথার ঔষধ চলাকালীন সাথে খাবেন।

কানের ব্যাথার ড্রপের নাম

কানের ভিতরে কোন জীবানু দ্বারা সংক্রমিত হলে বা পুজ হলে  এই ড্রপ গুলো ব্যবহার করতে পারেন। 

১। Clarizol
২। Kanis
৩। Candistin

কানে খইল হলে তা পরিস্কার করার জন্য নিচের ড্র্রপটি ব্যবহার করতে পারেন। 

১। waxsol

বিঃদ্রঃ উপরোক্ত ঔষধ একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দেওয়া। তারপর ও বলবো আপনার কানের সমস্যা থাকলে কানের অবস্থা ডাক্তার কে দেখিয়ে ঔষধ খাবেন।alert-warning 

কানের ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা

কানের ব্যথা কমানোর জন্য ঘরোয়া কিছু উপায় রয়েছে। তানযদি সঠিক ভাবে মেনে চলেন তাহলে দ্রুত ব্যাথা কমে যেতে পারে। নিচে ঘরোয়া কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হল —

১। গরম সেঁক:

কানে ব্যথা দেখা দিলে গরম সেঁক দিলে কানে আরাম পাওয়া যায় এবং ব্যাথা কমে । আর যদি  কান থেকে পুঁজ বের হয় তখন গরম সেঁক দিন। গরমের তাপে তাতে কানের ভেতরে জমে থাকা পুঁজ আস্তে আস্তে  বেরিয়ে আসবে এবং ব্যথাও কমে যাবে । গরমপানিতে একটা পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে নিংড়ে  তারপর যে কানে ব্যথা, তার উপরে ভেজা কাপড়টা দুই মিনিট ধরে রাখুন। তারপর মাথাটা অপর পাশে ফিরিয়ে কাত করে রাখুন। আস্তে আস্তে পুঁজ বের হতে থাকবে।

২। কান শুকনো রাখুন:

কোন ভাবেই যেন কানে পানি না ঢুকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিশেষ করে গোসলের সময় কানে পানি যেন না যায় সেদিকে ভালভাবে খেয়াল রাখতে হবে। তাই গোসল করতে যাওয়ার আগে কানে পেট্রোলিয়াম জেলি মাখানো তুলা কানে দিয়ে গোসল করুন।

৩। রসুনের তেল:

এক কোয়া রসুন নিয়ে অল্প থেঁতো করে সামান্য অলিভ অয়েল তেলে গরম করুন।রসুন দেওয়া তেল গরম হলে তা ভালভাবে ছেঁকে নিন।তারপর যে কানে সমস্যা ওই কানে দু’-তিন ফোঁটা দিন। দিনে কয়েকবার এভাবে দিলে একটু আরামবোধ করবেন।

৪। নিমের রস:

নিম পাতায় রয়েছে ব্যাথা কমানোর গুণ। তাই নিম পাতা  ভালো করে ধুয়ে থেঁতো করে রস বের করে নিন। তারপর নিমপাতার এই রস এক দু ফোটা কানে দিতে পারেন। এতে কানের ব্যাথা কমবে।

৫। প্রথামিক ঔষধ :

ঘরোয়া উপায় এর পাশাপাশি প্রাথমিক অবস্থায় প্যারাসিটামল অথবা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক ঔষধ খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন,  যাদের বয়স ১৬ বছরের কম তাদের এই সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় কোন ঔষধ সেবন করা ঠিক নয়।

যদি কানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে ব্যাথা হয়, তা হলে উপরে উল্লেখিত ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো আপনাকে সাময়িক আরাম দেবে ও ব্যথা কমাতে সহায়তা করবে।তবে তা একবারেই যে ভাল হয়ে যাবে এমন নয়। তাই  ব্যথা কমে গেলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আরো পড়ুনঃ হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায় ও হজম শক্তি বৃদ্ধির ট্যাবলেট।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন

ডাক্তারের কাছে কখন যাবেন এটা নিয়ে চিন্তিত থাকেন অনেকেই। আবার অনেকেই বুঝেন না যে সমস্যা টি মারাত্মক কিনা। ডাক্তার কাছে নিয়ে যেতে হবে নাকি আস্তে আস্তে ভাল হবে। তাদের জন্য  নিচের উল্লেখিত বিষয় গুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন —

  • যদি ৩ দিনের বেশি সময় কানে ব্যথা থাকলে এবং ব্যাথা না কমলে।
  • বার বার কান ব্যথা হলে। অর্থাৎ কিছুদিন পর পর  ব্যাথা দেখা দিলে।
  • হঠাৎ ব্যথা বেড়ে গেলে এবং অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকলে।
  • কানের ব্যাথার সাথে অনেক জ্বর অথবা গা গরম লাগলে এবং কাঁপুনি হলে।
  • কান ব্যাথা ও কানের আশেপাশে ফুলে গেলে।
  • কান থেকে পানি কিংবা তরল পদার্থ বের হতে থাকলে
  • কানে কম শুনলে অথবা একবারে শুনতে না পেলে।
  • কানে কিছু আটকে গেলে কোন ভাবে বের না হলে ।
  • শিশুর কানে ব্যাথা হলে আর বয়স ২ বছরের চেয়ে কম হলে এবং একইসাথে দুই কানে ব্যথা  মনে হলে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে।

শেষ কথা

কানের সমস্যা হতেই পারে। কানের সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। সমস্যা হলে ডাক্তার দেখিয়ে কান ব্যাথার ঔষধের নাম জেনে ঔষধ খাবেন। আশা করি কানের সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাবেন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url