রমজানে ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগীদের করণীয়।What to do with diabetes and other patients in Ramadan.

What to do with diabetes and other patients in Ramadan.

 

রমজানে ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগীদের করণীয়।What to do with diabetes and other patients in Ramadan.


সামনে আসছে পবিত্র মাস মাহে রমজান।
এই মাসে অন্যান্য  মাসের তুলনায়  সবকিছুতেই পরিবর্তন আসে। তেমনি
পবিত্র রমজান মাসে আমাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় ও  ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। যার  ফলে যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, যেমন ডায়াবেটিস,হাঁপানি, থাইরয়েড, উচ্চ রক্তচাপ,  ইত্যাদির কারণে যারা  সারা বছর ওষুধ খেয়ে আসেন তাদের এই রমজানে খুবই  সতর্ক থাকতে হবে  না হয় মারাত্মক সমস্যা হতে পারে । আমরা জানি  ডায়াবেটিস রুগীদের খাদ্যভাস ভিন্ন হয়ে থাকে। সব কিছু খাওয়া যায়না। তাই এই রমজানে সতর্ক থাকতে হবে।

রমজানে কেমন হওয়া উচিত খাবার

রোজার সময় মানুষকে ভোর থেকে সূর্যাস্ত অর্থাৎ সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হয় রোজার রাখার জন্য । আমাদের দেশে সাহ্‌রি ও ইফতারের মধ্যবর্তী সময় ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা হয়ে থাকে।  এ দীর্ঘ সময় একজন ডায়াবেটিস রোগীর না খেয়ে থাকা ঠিক হবে কিনা  তা নিয়ে অনেকেই অনেক মন্তব্য করে থাকে । ডায়াবেটিসের রোগীর  দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে শারীরিক নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে  পারে। তাই রোজা রাখলেও খুবই  সতর্কতার সহিত থাকতে হবে।

রোজা রাখা অবস্থায় যেসব রোগে আক্রান্ত হতে পারে। 


রোজা রাখা অবস্থায়  ডায়াবেটিসের রোগীর বিভিন্ন
ঝুঁকি দেখা দিতে পারে, তা হলোঃ
১.রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)
২. রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া (হাইপারগ্লাইসেমিয়া)
৩. ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস,
৪.পানিশূন্যতা ও
৫  থ্রম্বোএম্বোলিজম।

খাদ্য ব্যবস্থাপনা

সাহ্‌রির খাবার সাহরির শেষ সময়ে খেতে হবে । সাহ্‌রির খাবর কখনো  বাদ দেওয়া যাবে না।

ইফতারের সময় অধিক পরিমাণে পানি, সরবত খেতে পারেন কিন্তু  মিষ্টি ও চর্বিজাতীয় যে কোন  খাবার না খাওয়া উচিত হবে।আবার অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার ও খাবেন না কেননা ভাজাপোড়া কেবল শর্করা, রক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টেরল বাড়াবে তা নয়, বদহজম,গ্যাসটিক, পেপটিক আলসারের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সরবত ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, যেন তার পানিশূন্যতা না হয় এবং সারাদিনের দূর্বলতা কাটে । প্রচুর  পরিমানে ফলমূল, শাকসবজি, ডাল ও টকদই এজাতীয় খাবার তালিকাভুক্ত করতে পারেন। ডাবের পানি ও পান করতে পারেন এতে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হবে।

খাদ্যের ক্যালরির পরিমান ঠিক রেখে খাওয়ার পরিমাণ এবং খাওয়ার ধরন ঠিক করতে হবে যেন কোন কিছুতেই অতিরিক্ত না হয়ে যায় ।ঠিক মত খেয়ে  সঠিক ওজন ও ক্যালরির মাত্রার পরিমান  বজায় রাখতে হবে ।

রমজানের আগে অন্যান্য সময় যে পরিমাণ ক্যালরি যুক্ত খাবার খেতেন, রমজানে সেই ক্যালরির পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে তবে খাবার সময় এবং ধরন বদলাতে হবে, কেননা রমজানে আমরা সাধারনত ২ বার খাই।

প্রয়োজন হলে ডাক্তার সঙ্গে পরামর্শ করে খাবার তালিকা ঠিক করে নিতে পারেন এবং লক্ষ রাখতে হবে, ওষুধের সঙ্গে খাবারের যেন সামঞ্জস্য ঠিক থাকে।

নিয়মিত পরীক্ষা করুন

রোজাদার ডায়াবেটিস রোগীকে ঘন ঘন রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা পরিক্ষা করে দেখতে হবে রক্তের মাত্রা ঠিক আছে কিনা।  গ্লুকোমিটারে রক্ত পরীক্ষা করলে রোজার কোন সমস্যা হবে না রোজা ও ভাঙবে না । দিনে কমপক্ষে দুই থেকে তিনবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরিক্ষা করা ভালো। কখনো খারাপ লাগলে শরীর দূর্বলতা অনুভব হলে অবশ্যই পরিক্ষা করে দেখতে হবে। রক্তের গ্লুকোজ এর মাত্রা চার মিলিমোলের কম বা ষোল মিলিমোলের বেশি হয়ে গেলে  রোজা ভাঙতে হবে। অন্যতায় মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।

তা  ছাড়া মাঝেমধ্যে রক্তচাপও মাপবেন যে প্রেসার ঠিক আছে কিনা । কেননা রমজানে সবকিছুরই পরিবর্তন ঘটে। অনেক সময়  লবণাক্ত ও তৈলাক্ত খাবার অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আর ঘুমের সময়সূচির পরিবর্তনে কারনে রক্তচাপের ওঠানামা হতে পারে। আর পানিশূন্য হচ্ছে কি না, বুঝতে পারবেন প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে ও প্রস্রাবের রং দেখে, আবার জিব শুষ্ক ত্বক বিবর্ণ হয়ে গেলে ও।

ব্যায়াম ও পরিশ্রম

স্বাভাবিক শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করা যেতে পারে, তবে খুব বেশি কঠোর শ্রম বা ব্যায়াম না করাই ভালো এতে শরীর দূর্বল হয়ে যাবে এবং রোজা রাখতে ও কষ্ট হবে । আর তারাবিহ নামাজ ও অন্যান্য নামাজ পড়লে তা  শারীরিক শ্রম হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। তাই রমজানে নমাজ ঠিক মত পড়া উচিৎ।

রমজানের পূর্বে করণীয় 

যেসব ডায়াবেটিস রোগী রমজানে রোজা রাখবেন তাদের উচিৎ  রমজানের পূর্বেই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করা এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা যে পুরো রমজান মাস সঠিক ভাবে পালন করা যায়। এবং বিভিন্ন ওষুধ বা ইনসুলিনের নতুন শিডিউল চিকিৎসকের কাছে জেনে নিন। এবং যাদের  উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট বা অন্যান্য সমস্যা রয়েছে এবং  ওষুধ খেতে হয়  তারাও রমজানের আগেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন  এবং ওষুধের নিয়মকানুন সঠিক ভাবে জেনে নিন।

আপনার যে কোন তথ্য বা পরামর্শের জন্য কমেন্ট করুন।  ধন্যবাদ 

Next Post
No Comment
Add Comment
comment url