৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়

৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়: ওজন কমাতে আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি কিন্তু সফল হইনা। কারণ, ওজন কমানোর সঠিক ধারণা আমরা জানিনা। অনেকেই জানলে ও তা সঠিক ভাবে পালন করেন না। যার ফলে ওজন কমে না। ওজন বেড়ে গেলে কতটা কষ্ট তা শুধুমাত্র ঐ ব্যাক্তিই বলতে পারবে। চলাফেরা কাজকর্মে সব কিছুতেই কষ্ট বেশি হয়ে থাকে। পাশাপাশি নিজেকে দেখতে ও অসুন্দর লাগে এবং বিভিন্ন রোগ জীবাণু আক্রমণ করে।

৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়

আজকের এই আর্টিক্যালের টাইটেল দেখে অনেকেই অবাক হতে পারেন। অনেকের মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগবে আসলেই কি ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানো সম্ভব? আমি এর উত্তরে বলবো সম্ভব আবার সম্ভব না। কারোর কারোর ক্ষেত্রে সম্ভব হতে পারে তবে সেটা ৫%-১০% মানুষের।  বাকি ৯০% মানুষের জন্য সম্ভব নয়।

তারপর ও মানুষ জানতে চায় তাই এই কিওয়ার্ড নিয়ে আর্টিক্যাল টা লেখা।  শুধু তাই নয় মানুষ আরো জানতে চায়, ৩ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়, কেউ জানতে চায় ১৫ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় আবার অনোকে ৩০ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় ইত্যাদি। তবে ৩০ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় এটা সম্ভব।

৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়

তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এমন ৮ টি অভ্যাসের কথা উল্লেখ করবো যা প্রতিদিন নিয়ম করে করতে পারলে ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন না কমলে ও কাছাকাছি কমবে। পাশাপাশি আপনার শরীর ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।

১. খালি পেটে আধা লিটার পানি খাওয়া

সকালে খাওয়ার আগে খালি পেটে আধা লিটার বা পূর্ণ দুই গ্লাস পানি পান করবেন। এতে আপনার কাছে মনে হবে পেট কিছুটা ভরে আছে। ফলে সকালের খাবার খাওয়ার সময় অল্প খেলেই মনে হবে পেট ভরে গেছে। তা ছাড়া পানি যত বেশি পান করবেন তত ভাল। এতে বিভিন্ন রোগ জীবাণু কমে। এছাড়া ও পানিতে কোন ক্যালরি না থাকায় যতই পানি পান করেন না কেন এতে কোন ওজন বাড়বেনা। তাই সকালে খাওয়ার আগে বেশি করে পানি পান করে নিবেন।

শুধু সকালেই নয় পাশাপাশি দুপুর ও রাতের খাবারের আগে ও এই পদ্ধতিটি এপ্লাই করতে পারেন। প্রতিবার খাওয়ার আগে আধা লিটার বা দুই গ্লাস পানি খেয়ে খাওয়া শুরু করলে অন্যান্য সময়ের থেকে অনেক কম খাবার খাবেন। কারণ তখন অল্প খেলেই পেট ভরে যাবে। এভাবে দৈনিক এই অভ্যাসটি করতে পারলে আপনার ওজন কমে যাবে।

আমরা অনেকেই মনে করি যে, খাওয়ার আগে পানি পান করা উচিৎ নয় বা পান করলে ও কমপক্ষে আধা ঘণ্টা বা ২০ মিনিট আগে পান করতে হয় না হয় হজমের সমস্যা হতে পারে। আসলে এটার কোন ভিত্তি নেই। কোন ডাক্তারই এমন কথা বলে না এটার বৈজ্ঞানিক কোন প্রমান ও নেই।

তবে অনেকে একসাথে আধা লিটার পানি বা খালি পেটে   এতো পানি খাওয়ার অভ্যাস নেই। তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হবে একসাথে আধা লিটার পানি খেতে অস্বস্তি লাগবে। তাই প্রথম দিকে কম পান করুন এবং আস্তে আস্তে পরিমান বাড়াবেন। আশা করি এই নিয়ম মেনে চললে ওজন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

২. সারাদিনের নাস্তা সকালেই ঠিক করে ফেলা

দৈনন্দিন আমরা খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফাস্ট ফুড খেয়ে থাকি। বাহিরে গেলে গেলে কাজের বিরতিতে বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন, বিস্কুট, কেক, পুরি, সিঙ্গারা, সমুচা ইত্যাদি যা পাই সামনে তাই খেতে শুরু করি। এইগুলো কতটুকু স্বাস্থ্যকর তা আমরা একবার ও ভাবি না। এইসব ভাজাপোড়া আমাদের শরীরের জন অস্বাস্থ্যকর জেনে ও আমরা ঠিকই খেয়ে যাচ্ছি।  যা আমাদের শরীরের ক্ষতি করছে এবং পাশাপাশি ওজন ও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এই জন্য সকালেই সারাদিনের নাস্তা কি খাওয়া যায় তা ঠিক করে নেওয়া। কাজে বের হওয়ার আগেই নাস্তা রেডি করে বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া। যদি আপনার ওজন বেশি হয়ে থাকে তাহলে সকালে বের হওয়ার আগে একটা বক্সে ফল, শশা, গাজর বা টমেটো কেটে সাথে নিয়ে যেতে পারেন। কাজের ফাঁকে বা বিরতিতে তা খেয়ে নিবেন।

আবার বাসায় বানানো যে কোন স্বাস্থ্যকর খাবার সাথে নিয়ে যেতে পারেন। অথবা ৮-১০ টা বাদাম বা খেজুর ও একটা পেকেটে নিয়ে যেতে পারেন। তাহলে অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে দূরে থাকতে পারবেন৷ ফলে রোগ জীবাণু কমবে এবং ওজন ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

৩. সকালে  হাঁটার অভ্যাস করা

হাঁটা শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভাল। প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটতে পারলে ওজন কমাতে সহায়তা করবে। যাদের সকালে ব্যস্ততা থাকে তারা সকালে যে কোন কাজে বের হলে কমপক্ষে ১-২ কিঃ রাস্তা হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। হাঁটার অভ্যাস না থাকলে প্রতিদিন অল্প অল্প করে হাটুন। বাজারে কিংবা বাচ্চাকে স্কুলে হেঁটে দিয়ে আসেন বা আসার সময় হেঁটে আসবেন।

আপনার যদি হাঁটার অভ্যাস না থাকে বা রিকশায় চলাচলের অভ্যাস থাকে তাহলে শেষ ১০ মিনিট আগে নেমে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। দৈনন্দিন এই হাঁটা আপনার জন্য অনেক ভাল ফলাফল দিবে। প্রথমে অল্প অল্প করে তারপর আস্তে আস্তে সময় বাড়াবেন এবং দ্রুত হাঁটবেন যেন শরীর দিয়ে ঘাম বের হয়।

প্রতিদিন যদি নিয়ম করে কিছু সময় হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন এবং নিয়মিত হাঁটেন তাহলে আপনার ওজন কমার পাশাপাশি শরীর ও সুস্থ থাকবে। যাদের মেদ বেড়ে গেছে তাদের মেদ কমাতে ও দারুণ ভাবে কাজ করবে।

৪. চিনি ছাড়া চা-কফি খাওয়া

সকালে বা রাতে আমরা চা-কফি খেতে মিস করি না।  এটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে পরেছে। তবে আপনার ওজন যদি অতিরিক্ত হয় এবং চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে এখন থেকে চিনি ছাড়া খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। যদিও প্রথম প্রথম খেতে একটু খারাপ  লাগবে কিন্তু অভ্যাস হয়ে গেলে আর খেতে সমস্যা হবে না।

চিনি তে ক্যালরি থাকে যা খেলে ওজন বেড়ে যাবে। সাধারণত চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ও ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই স্বাস্থ্য ভাল রাখতে যথাসম্ভব চিনি এড়িয়ে চলুন।

অনেকেই আবার চা বা কফি খেলে সাথে বিস্কুট, কেক  ইত্যাদি খেয়ে থাকেন। এই গুলো বানাতে সাধারণত প্রচুর চিনি, ময়দা ও ফ্যাট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যার ফলে এতে প্রচুর ক্যালরি থাকে। ওজন কমাতে চাইলে চা-কফি তে চিনি বাদ দেওয়ার পাশাপাশি বিস্কুট ও এড়িয়ে চলতে হবে।

৫. প্রতিদিন সকালে ওজন মাপা

প্রতিদিন সকালে ওজন মাপার অভ্যাস করা উচিৎ। সামপ্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ওজন মাপে, তারা ওজন কমাতে বেশি সফল হয়। কারণ, প্রতিদিন পর্যবেক্ষণে ওজন কমানোর প্রতি গুরুত্ব থাকে বেশি। যখন দেখবেন ওজন কমছে না তখন স্বাস্থ্যকর অভ্যাস করার প্রতি আরো গুরুত্ব দিবেন। তাই নিয়মিত ওজন মাপা উচিৎ।

ওজন মাপার জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন তা হল, সকালে বাথরুম সেরে খালি পেটে ওজন মাপবেন। এরপর ওজন একটি চার্টে বা ক্যালেন্ডারে লিখে রাখবেন অথবা ফোনে বিভিন্ন অ্যাপ পাওয়া যায় যেখানে সাপ্তাহিক, মাসিক ও বাৎসরিক ওজন গ্রাফ আকারে দেখানো হয়। এগুলোতেও ওজন সেইভ করে রাখতে পারেন। এভাবে সহজেই প্রতিদিন ওজন কতটুকু বাড়ছে নাকি কমছে তা জানতে পারবেন।

যদি সকল নিয়ম মেনে ও ওজন না কমে তখন এর কারণ খুঁজে বের করে তা পরিবর্তন করার মাধ্যমেই ওজন কমিয়ে আনা সম্ভব। যখন দেখবেন ওজন কমছে না তখন আপনি নিয়ম গুলোর প্রতি আরো গুরুত্ব দিবেন। তখন আরো বেশি হাটতে চাইবেন। এভাবে আস্তে আস্তে ওজন কমতে শুরু করবে।

৬. সকাল সকাল ব্যায়াম করা

ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম করা বাধ্যতামূলকই বলা যায়। প্রতিদিন নিয়ম করে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করা উচিৎ। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ হাঁটার পাশাপাশি আধা ঘণ্টা থেকো ১ ঘন্টা ব্যায়াম করবেন। এতে ওজন দ্রুত কমতে শুরু করবে। ওজন কমানোর জন্য অনেকেই জিমে ভর্তি হয়। আপনি চাইলে জিমে ভর্তি না হয়ে নিজে নিজেই কিছু ব্যায়াম করে ওজন কমাতে পারেন।

কিছু কিছু  ব্যায়াম রয়েছে যেমন, দড়িলাফ, দ্রুত হাঁটা, দৌড়, উঠবস, বুক ডাউন ও ভারোত্তোলন আরো বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন । এতে দ্রুত ওজন কমাতে সহায়তা করে।

৭. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো

শরীর সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। ওজন কমানোর সাথে ঘুমের ও সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, কম ঘুম হলে ক্ষুধা লাগে বেশি ফলে অতিরিক্ত খেতে মন চাইবে। রাতে কম ঘুমালে জেগে থাকলে তখন ক্ষুধা লাগবে তখন খেলে প্রযোজনের অতিরিক্ত খাওয়া হবে। অনেক সময় দেখা যাবে ফ্যাট বা কার্বোহাইড্রেট যুক্ত কাবার খেতে ইচ্ছা হবে। ফলে খেলে ওজন আরো বাড়িয়ে তুলবে। 

ঘুম যে শুধু বিশ্রামের জন্য তা নয়। ঘুমালে মস্তিষ্ক সচল থাকে। সারাদিন কাজ ব্যায়ামের কারণে শরীর ক্লান্ত ও দুর্বল অনুভব হতে পারে তাই পর্যাপ্ত ঘুমালে সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। তাই ওজন কমানোর জন্য পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। সাধারণত প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। তাই শরীর সুস্থ ও ওজন কমাতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন

৮. প্রতিদিনের জন্য অ্যাকশন পয়েন্ট ঠিক করা

ওজন কমাতে অ্যাকশন পয়েন্ট খুবই দারুণ কাজ করে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আগে ওজন মেপে তারপর একটি অ্যাকশন পয়েন্ট বেছে নিতে পারেন।  অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই অ্যাকশন পয়েন্ট নিয়ে একটি গবেষণা করেন। গবেষণায় তারা ১০০ জন অতিরিক্ত ওজনের মানুষকে বেছে নেন।

তাদের গবেষণায় এই ১০০ জন অতিরিক্ত ওজনের মানুষকে দুই দলে ভাগ করা হয়।  এক দলকে প্রতিদিন শুধু সকালে ওজন মাপতে বলা হয়। আরেকদলকেও সকালে ওজন মাপতে বলা হয়, তবে এর সাথে সেই দিনের জন্য একটি অ্যাকশন পয়েন্ট বা নির্দিষ্ট কাজ ঠিক করতে বলা হয় যা নিয়মিত করলে ওজন কমাতে সাহায্য করবে। এমন কাজের মধ্যে কয়েকটি ছিলো—

  • আজকে আমি টেবিলে বসে, ফোন-টিভি না দেখা ছাড়া বাহিরে কোথাও কোন খাবার খাবো না।
  • আজকে বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা না দিয়ে একসাথে হেঁটে হেঁটে কথা বলবো।
  • রাত ৮টার পর আজকে আর কোন কিছুই খাবো না।
  • আজকে সারাদিনে ১০০০০ কদম হাঁটব।
  • বাহিরের কোন কোক, সেভেনআপ জাতীয় পানি পান করবোনা। 

এরকম আরো অনেকগুলো অ্যাকশন পয়েন্টের তালিকা থেকে যেকোনো একটা কাজ তারা প্রতিদিনের জন্য ঠিক করেন। এভাবে প্রতিদিন তারা যেকোনো একটা অ্যাকশন পয়েন্ট ঠিক করে সেই অনুযায়ী ঐদিন পার করতো। এবং সপ্তাহ শেষে চিন্তা করতো কোন কাজটি তাদেন ওজন কমাতে বেশি সাহায্য করেছে তা খুঁজে বের করতো।

কয়েক সপ্তাহ পর কোন দলের কতটুকু ওজন কমেছে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। তখন দেখা যায়, যারা শুধু ওজন মেপেছে অ্যাকশন পয়েন্ট ঠিক করেনি তাদের গড়ে ১ কেজির মত ওজন কমেছে। আর যারা ওজন মাপার পাশাপাশি অ্যাকশন পয়েন্ট ও ঠিক করেছিল তাদের গড়ে ৪ কেজির মত ওজন কমে।

তাই প্রতিদিন ওজন মাপার পর যে কোন একটি অ্যাকশন পয়েন্ট ও বেছে নিতে পারেন। পাশাপাশি অন্যান্য উপায় গুলো ও মেনে চললে দ্রুত ওজন কমতে সাহায্য করবে।

শেষ কথা

ওজন কমানোর প্রতিযোগীতায় সবাই নামে। কিন্তু সবাই সফল হতে পারেনা। কারণ, ওজন কমানোর জন্য আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। উপরে উল্লেখিত ৮ টি উপায় সঠিকভাবে মেনে চললে পাশাপাশি খাদ্যাভাস ঠিক রাখলে ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানো সম্ভব। পাশাপাশি আপনার শরীর ও সুস্থ রাখবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url