বমি হলে করনীয়। বমির ট্যাবলেট নাম

বমির ট্যাবলেটের নামঃ বমির সমস্যা আমাদের অনেকেরই রয়েছে। কখনো কিছু খেলে বা ভ্রমণ করলে বমির সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে বমিকে সাধারণত কোন রোগ হিসেবে ধরে নেন। কিন্তু আসল কথা হল বমি কোনো রোগ নয়। শরীরের নানা রোগ-ব্যাধি বা অসুস্থতার কারণে বমি হতে পারে। সাধারণত বমি একটি সাভাবিক সমস্যা কোনো উদ্বেগজনক শারীরিক কোন সমস্যা নয়।

বমি হলে করনীয়। বমির ট্যাবলেট নাম

তবে বমি হওয়ার পরে শরীর খুবই দূর্বল হয়ে যায়। যদি দীর্ঘ সময় অব্যাহতভাবে বমি হতে থাকে এবং প্রাথমিক চিকিৎসায়  যদি বমি বন্ধ না হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং বমির কারণ খুঁজে  সঠিক চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে । তাই আজকে আমরা বমি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

বমি হলে করনীয়। বমির ট্যাবলেট নাম

ভমিটিং বা বমি কি?

আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন খাবার খেয়ে থাকি। এই খাবার সাধারণত মুখগহ্বর হতে গলানালী দিয়ে একদম পাকস্থলিতে প্রবেশ করে। কিন্তু অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যার কারণে পাকস্থলির এই খাবার উদ্গীরণ হয়ে উল্টো দিকে অর্থাৎ মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। উল্টো দিকে উদগীরণ হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে আমরা বলি ভমিটিং বা বমি। 

বমি কেন হয়?

বমি হওয়ার বেশ কারণ রয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে বমি হতে দেখা যায়। নিচে বমি হওয়ার কারণ গুলো উল্লেখ করা হলঃ

সাধারনত যেসব কারণে বমি হয়ে থাকে তা হল, বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি কোন অসুখ, গর্ভাবস্থায় , জ্বর, অস্বাস্থ্যকর খাবার,  এমনকি অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক কিংবা বদহজমের কারণে বমি হয়ে থাকে। আবার অনেকের যানবাহনে উঠলে মোশন সিকনেসের কারণেও অনেকে বমি করে।

তাছাড়া ও আরো বিভিন্ন কারণে বমি হয়ে থাকে। আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না কেন বমি হল বা বমি হওয়ার কারণ কি। তবে সাধারণ লক্ষণ ছাড়াও আরো যেসব কারণে বমি হয়ে থাকে তা হচ্ছে ফুডবার্ন ইলনেস যেমন:ফুড পয়জনিং, ইনডাইজেশন বা হজমে সমস্যা, ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত ইনফেকশন (যাকে অনেকে স্টোম্যাক বাগ হিসেবে বুঝেন), মোশন সিকনেস বা যানবাহনে চলাচলের সময় বমি,

মাইগ্রেনজনিত মাথা ব্যথা, অতিরিক্ত ওষুধ সেবন, অতিরিক্ত মদ্যপান, অতিরিক্ত আহার, অ্যাসিড রিফ্ল্যাক্স বা পেটে এসিডিটিজনিত সমস্যা, গলব্লাডারে সমস্যা, লিভারের সমস্যা, অতিমাত্রায় মানসিক চাপ, ভীতি, পয়জনাস কোনো খাবার খেয়ে ফেলা, ফুড এলার্জি, পেটের আলসার, পেটে প্রদাহ বা গ্যাস্ট্রাইটিস, তীব্র বা ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত পদার্থের ঘ্রান নাকে প্রবেশ করা, বাওয়েল অবস্ট্রাকশন, তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন, এপেনডিসাইটিস ইত্যাদি।

আরো পড়ুনঃ পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি এবং পাতলা পায়খানার ট্যাবলেটের নাম

এছাড়া কিছু শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে বমি হতে পারে।আবার বয়স ও অন্য কারণেও বমি হতে পারে। যেমন :শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের বমি হওয়া ইত্যাদি।

বমি হওয়াটা যেমন কষ্টের ঠিক তেমনই ঘন ঘন বমি হলে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই অতিমাত্রায় বমির সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করা উচিৎ। 

বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত

বমি বিভিন্ন সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। বমি হওয়ার কারণে শরীর প্রচন্ড দূর্বল হয়ে যায়। এবং পেটে অস্বস্তি ভাব থাকে বা অশান্তি লাগে। এই গুলো দূর করতে বমি হওয়ার পর কয়েকটি খাবার খেতে পারেন। তাহলে পেটের অস্বস্তি ভাব ও অশান্তি দূর হবে।

১। বরফ বা ঠান্ডা পানি

বমি হয়ে যাওয়ার পরে শরীর অনেক দূর্বল হয়ে পরে তাই পানি পানের কথা বলা হয়। তাই বমি হওয়ার পরে ২-৩ টি বরফের টুকরো খেতে পারেন অথবা ঠান্ডা পানি পান করতে পারেন। এতে বমি বমি ভাব দূর হবে এবং পেটের অস্বস্তি ভাব ও দূর হয়ে যাবে।   

। কমলার জুস

আপনার যদি হঠাৎ বমি হয় বা বমি বমি ভাব অনুভব হয় তাহলে কমলা দিয়ে এক গ্লাস কমলার জুস বানিয়ে পান করতে পারেন। এতে বমি বমি ভাব দূর হবে।

। ব্রাট ডায়েট

অনেকেই হয়তো জানেনা ব্রাট ডায়েট কি?  আসলে ব্রাট ডায়েট হল কলা, ভাত, আপেল ও টোস্টকে ব্রাট ডায়েট বলা হয়। বমি হওয়ার পরে যখন ক্ষুধা অনুভব হয় তখন এই খাবারগুলো খেতে পারেন। এতে পেট ঠান্ডা হবে এমনকি শুধুমাত্র একটি কলা খেলেও আপনার পাকস্থলী ঠান্ডা হবে।

৫। দই

বমি হওয়ার পরে ঠান্ডা দই খেতে পারেন। কারণ এটি সহজেই হজম হয়ে যায় এবং পেট ঠান্ডা রাখে। বমি হওয়ার পরে ঠান্ডা দই খেলে পেটের অস্বস্তি ভাব ও অস্থিরতা দূর করে এবং এসিডিটি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৬। মশলাবিহীন খাবার

বমি হওয়ার পরে মশলাযুক্ত খাবার খাবেন না। এতে আরো বিপাকে পরতে পারেন। তাই বমি হওয়ার পরে এমন খাবার খাওয়া উচিৎ যাতে মশলা নেই বা কম মশলাযুক্ত যেমন- খিচুড়ি, স্যান্ডউইচ, সিদ্ধ আলু ইত্যাদি।  কারণ মশলাযুক্ত খাবার পেটের এসিডিটির সমস্যা সৃষ্টি করে ফলে পুনরায় বমির হতে পারে ।

আরো পড়ুনঃ প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট এর নাম ও দাম এবং ঘরে বসে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার উপায় 

বমির ট্যাবলেট নাম 

বমির ট্যাবলেট এর নাম জানতে চান। কারণ অনেকের বমির সমস্যা থাকার কারনে সাথে রাখতে চান। কেউ বা ভ্রমনে বের হলে বমির সমস্যা দেখা দেয় তাই বমি বন্ধ করার ঔষধের নাম জানার প্রয়োজন পরে। নিচে কয়েকটি বমি বন্ধ করার ট্যাবলেট এর নাম দেওয়া হলঃ

        Name→ Company →Price 
  • Motigut → Square → 3.50 Taka
  • Apidone → Team Farma → 2 Taka
  • Omidon → Incepta → 3 Taka
  • Domiren →Renata →3 Taka
  • Vomitop →Navana→2 Taka

বমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম 

বমির ট্যাবলেট সকালে খাওয়ার ১০ মিনিট পূর্বে খাবেন। বেশি সমস্যা হলে রাতে ও খেতে পারেন একই নিয়মে। তবে ৮ ঘন্টার মধ্যে খাওয়া যাবে না । আর ভ্রমনের সময় গাড়িতে উঠার আগে খেয়ে নিতে পারেন। তবে বমির সমস্যা থাকলে ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা উচিৎ। 

বমি বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়

কোন কারণে হঠাৎ বমির সমস্যা দেখা দিলে ঘরোয়া উপায়ে বমি বন্ধ করা যায়। তাৎক্ষণিক বমি থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া কিছু উপায় অনুসরণ করে বমি বন্ধ করতে পারবেন। জেনে নিন ঘরোয়া উপায় গুলো-

সবুজ এলাচ

বমি দূর করার জন্য সবুজ এলাচ খেতে পারেন। সবুজ এলাচ বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে। সবুজ এলাচ দ্রুত বমি সারাতে কার্যকর। যদি হঠাৎ  আপনার বমি বমি ভাব হয়, তখন সামান্য মধু দিয়ে এলাচ চিবিয়ে খেতে পারেন।অথবা ১/২ চা চামচ এলাচ গুঁড়োর সাথে সামান্য মধু  ভাল করে মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে বমি বমি ভাব এবং বমি দ্রুত বন্ধ হবে।

মৌরি বীজ

মৌরি বীজ সাধারণত আমরা মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে বা মুখ ফ্রেস রাখতে খেয়ে থাকি। কিন্তু তা ছাড়া ও সেই মৌরি বীজের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। এটি বমি বমি ভাব ও বমি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। আপনি মৌরি বীজ সম্ভব হলে চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা এক কাপ মৌরি বীজের চা পান করতে পারেন।

লেবুর রস

বমি বন্ধ করতে লেবুর রস বা লেবুর শরবত খেতে পারেন। আমরা জানি লেবুতে প্রচুর ভিটামিন সি এবং খনিজ উপাদান আছে। যা বমি প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এজন্য যখনই বমি বমি ভাব হবে বা বমি হবে তখন এক গ্লাস তাজা লেবুর শরবত পান করতে পারেন। বা শুধু লেবু চিবিয়ে খেতে পারেন। আবার বমি বমি ভাব হলে লেবুর পাতার ঘ্রান নিতে পারেন।

লবঙ্গ

গাড়িতে উঠলে বা রাস্তায় বের হলেই অনেকেরই মোশন সিকনেসে ভুগেন। আপনার যদি এই সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই ভ্রমন এর সময় বা বের হলে সাথে লবঙ্গ রাখুন। লবঙ্গ আপনাকে দ্রুত বমি বমি ভাব ও মোশন সিকনেস এর সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করবে।
বমি বমি ভাব হলে সাথে সাথে লবঙ্গের টুকরো কিছুক্ষণ মুখে রাখুন তাহলে সাথে সাথে বমি বমি ভাব বন্ধ হবে। এ ছাড়াও এক গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ লবঙ্গ সেদ্ধ করে চা বানিয়ে পান করুন।

আদা

আপনি যদি বমি বমি ভাব অনুভব করেন অথবা বমি হলে এরপর এক কাপ আদা চা খেতে পারেন। আদা বমি বমি ভাব দূর করবে এবং আদা পেটের জ্বালা বা অস্বস্তি ভাব দূর করতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ কোমর ব্যাথার কারণ, প্রতিকার ও কোমর বা মাজা ব্যাথার ট্যাবলেটের নাম

লবণ এবং চিনির পানি

বমি বন্ধ করার আরেকটি দ্রুততম পদ্ধতি হলো লবণ এবং চিনির পানি পান করা। শরীরে লবণের ভারসাম্যহীনতা বা ঘাটতির কারণে অনেক সময় বমি হয়ে থাকে। আবার বমি করার কারণে শরীর থেকে লবণ পানি বের হয়ে যায় ফলে শরীর খুবই দূর্বল হয়ে পরে। এজন্য এক গ্লাস পানিতে সামান্য চিনি এবং লবণ মিশিয়ে পান করুন। তাহলে শরীরের দূর্বলতা দূর হবে এবং বমি বন্ধ হবে। অথবা স্যালাইন খেতে পারেন এতে ও শরীরের পানি শূন্যতা ও দূর্বলতা দূর হবে।

শেষ কথা

বমি সাভাবিক সমস্যা হলে ও এটা বার বার হতে থাকলে বমি বন্ধ না হলে দ্রুত ডাক্তার এর কাছে নেওয়া উচিৎ। কারণ বমি হলে শরীর অনেক দূর্বল হয়ে যায়। তাই বমি হলে করণীয় জেনে বমির ট্যাবলেট খেতে পারেন। এবং বমি হওয়ার পর যেসব খাবার খাওয়া উচিৎ তার মাধ্যমে বমি বমি ভাব ও বমি বন্ধ করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায় ও হজম শক্তি বৃদ্ধির ট্যাবলেট।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url