Vitamin-D Deficiency: ভিটামিন ডি এর অভাব হলে কিভাবে বুঝবেন?

শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব বুঝার উপায়ঃ ভিটামিন ডি একটি ফ্যাটে দ্রবণীয় ভিটামিন। এর রাসায়নি নাম ক্যালসিফেরল। এটি রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। করোনাকালে এটি সকলে কাছে খুবই পরিচিত হয়ে উঠেছে। কেননা এটি রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের মাংসপেশিকে দৃঢ়তা প্রদান করে। আর এটির অভাব হলে মাংসপেশির সমস্যা দেখা দেয়।

শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে যেভাবে বুঝবেন 

কোভিড-১৯ মহামারির এ সময়ে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ভিটামিন ডির ভূমিকা অপরিসীম। ভিটামিন ডি মূলত চর্বিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন, যা ‘সানশাইন ভিটামিন’ নামে পরিচিত। গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমাদের দেশে ৮০ শতাংশ মানুষের দেহেই ভিটামিন ডির অভাব আছে।

শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব থাকলে কিভাবে বুঝবেন? vitamin d deficiency

আমাদের অধিকাংশ মানুষের দেহেই ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে। কিন্তু আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থাকলে আমরা কিভাবে বুঝব? আজকে আমরা জানব কি কি লক্ষণ দেখে আমরা বুঝব আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণে আছে। আরও জানবো কোন কোন প্রাণিজ উৎস থেকে আপনি ভিটামিন ডি-এর চাহিদা পূরণ করতে পারব।

আরো পড়ুনঃ ইউরিন ইনফেকশন বা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হলে কি করবেন 

শরীরেই ভিটামিন ডি তৈরি হয়ঃ

দেহের মোট চাহিদার ৮০ শতাংশ ভিটামিন ডি আসে সূর্যালোক থেকে। আমাদের ত্বকের নিচে কোলেস্টেরল থাকে। সেই কোলেস্টেরল থেকে সূর্যালোকের সাহায্যে শরীরেই ভিটামিন ডি তৈরি হয় । দুপুরের কাছাকাছি সময়ে সূর্য যখন সবচেয়ে ওপরের দিকে থাকে, তখন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ভিটামিন ডি তৈরিতে সবচেয়ে বেশি উপযোগী হয়ে থাকে।

সাধারণত ২৯০ থেকে ৩১৫ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোক রশ্মি ভিটামিন ডি তৈরিতে সাহায্য করে। আমাদের দেহ পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যালোক পেলে ভিটামিন ডি তৈরি করে। কিন্তু কাঁচের ভিতরে রোদ প্রবেশ করতে পারে না ফলে ভিটামিন ডিও তৈরী করতে পারে না।

ভিটামিন ডি কি?

উইকিপেডিয়ার তথ্য মতে ভিটামিন ডি হলো চর্বিতে দ্রবণীয় একটি সেকোস্টেরয়েড গ্রুপ যা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফেট এর আন্ত্রিক শোষণ এবং মানবদেহে বিভিন্ন জৈবিক প্রভাব সৃষ্টির জন্য দায়ী।

আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি কী কাজ করে?

ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড়কে শক্ত করে। আর ভিটামিন ডি ক্যালসিয়ামকে শরীরে শুষে নিতে সাহায্য করে। তাই শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব থাকলে হাড় শক্ত হবে না। ভিটামিন ডি-এর স্বাভাবিক মাত্রা ৩০-১০০ ন্যানো গ্রাম/মিলি লিটার। এর কম বিশেষ করে ২০ ন্যানো গ্রাম/মিলি লিটার এর কম হলেই নানাবিধ উপসর্গ দেখা দেয়। এখন আমরা জেনে নিব এটি আমাদের শরীরে কী কাজ করে-

* ভিটামিন ডি ক্যালিসিয়াম ও ফসফরাসের শোষণে সহায়তা করে।
* হাঁড় ও দাঁত গঠনে এটি ভূমিকা রাখে।
* রক্তে ক্যালিসিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
* শিশুদের রিকেট রোগ প্রতিরোদ করে।
* বড়দের অস্টিওম্যালেশিয়া রোগ প্রতিরোধ করে।
* ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
* দেহে পর্যাপ্ত পরিমান ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে।
* ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
* আলঝেইমার, মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতেও ভিটামিন ডি প্রয়োজন।

আরো পড়ুনঃ সকালে নিয়মিত হাঁটার ১০টি কার্যকরি  উপকারিতা

মুড ভাল করতে ও ওজন বাড়ার সাথে ভিটামিন ডি-এর যোগসূত্র

ভিটামিন ডি হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনগুলির মধ্যে একটি যা ক্যালসিয়াম শোষণকে নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন ডি-এর সাথে সেরোটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার এর একটি চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। সেরোটোনিন এমন একটি জৈবিক পদার্থ যা রক্তে হরমোনের মতো আচরণ করে এবং আমাদের মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।

এই নিউরোট্রান্সমিটার মুড রেগুলেশনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেরোটোনিন আমাদের মাঝে ইউফোরিয়া বা ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি করে। শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পরোক্ষভাবে সেরোটোনিন লেভেলও কমিয়ে দেয়, শুরু হয় মুড সুইং, ঘুমে ব্যাঘাত এবং দুশ্চিন্তা। এই সময় কর্টিসল নামক হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে দেয় ,যার প্রভাবে বেড়ে যায় ওজন আর কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

ভিটামিন ডি অভাবজনিত রোগঃ

ভিটামিন ডি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এর অভাবে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। যেমনঃ শিশুদের রিকেট রোগ হয় এ রোগের ফলে হাড় নরম ও দুর্বল হয়ে যায়।, বড়দের অস্টিওমিলেশিয়া এবং বয়স্কদের হাড়জনিত ক্ষয় রোগ দেখা দেয়।

কীভাবে বুঝবেন শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব রয়েছে?

শিশুদের ক্ষেত্রেঃ

* শিশু অস্থির, খিটখিটে ও ফ্যাকাশে হয়।
* মাংসপেশি থলথলে হয়।
* মাথা ঘামতে থাকে।
* পেট ফুলে যায়।
* প্রায়ই শ্বাসতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ ঘটে।
* শিশুর বৃদ্ধি দেরিতে হয়।
* দাঁত ওঠেতে দেরি হয়।
* শিশু সঠিক বয়সে বসতে, দাঁড়াতে, হামাগুড়ি দিতে ও হাঁটতে পারে না।
* শিশুর পায়ের হাড় বেঁকে যায়।
* শরীরের অন্যান্য হাড়েরও বিকৃতি ঘটে।

আরো পড়ুনঃ ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ১০টি প্রাকৃতিক উপায়

প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেঃ

প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি থাকলে অস্টিওম্যালাসিয়ার মতো রোগ হয়। আমরা জানি ভিটামিন ডি অন্ত্রেক্যালশিয়ামের শোষণ ও ফসফরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এর অভাবে রক্তে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের পরিমাণ কমে যায়, তাই রক্তে এর স্বাভাবিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে আমাদের শরীর বাধ্য হয় হাড় থেকে এই খনিজগুলো শোষণ করে রক্তে নিয়ে আসতে । ফলে হাড়ের গঠন নাজুক হয়ে যায়।

ভিটামিন ডি এর অভাবে আরো যেসব রোগ দেখা দেয়ঃ

* হাড়ের গভীরে যন্ত্রণা,
* জয়েন্টে ব্যথা
* পেশীতে ব্যাথা
* শরীরে ক্লান্তি দেখা দেয়
* চুল পড়ে যায়
* স্থুলতা
* বুক ধড়ফড় করা,
* ঘা শুকাতে অনেক সময় লেগে যায়,
* বিষণ্ণতা এবং নিদ্রাহীনতা।

শরীরে কেন ভিটামিন-ডি এর অভাব হয়?

ভিটামিন ডি এর প্রধান প্রাকৃতিক উৎস হলো সূর্যের আলো। আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষ সূর্যালোক শুষে নেয়। বিভিন্ন কারণে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিতে পারে। যেমন- পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যালোকের সংস্পর্শ না পেলে ভিটামিন-ডি এর অভাব দেখা দিতে পারে। অথবা খাবারে ভিটামিন ডি-র পরিমান কম থাকলে ভিটামিন-ডি এর অভাব দেখা দিতে পারে।

এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ, হাইপোপ্যারাথাইরয়েডিসম, লিভারের রোগসহ আরো কিছু রোগের কারণে শরীরে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে।

ভিটামিন ডি-এর উৎসঃ

ভিটামিন ডি শুধু একটি ভিটামিনই নয়। এটি একটি হরমোন বা প্রাণরস। এটির বেশ কয়েকটি ফর্ম (ভিটার) বিদ্যমান রয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্রধান ফর্ম হল ভিটামিন ডি-২ বা আর্গোক্যালসিফেরল, এবং ভিটামিন ডি-৩ বা কোলেক্যালসিফেরল।

১) ভিটামিন ডি২ বা আর্গোক্যালসিফেরল উদ্ভিদে উৎপাদিত হয়। এটি ক্যালসিয়াম শোষণে এইডস, ফসফরাস নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এটি অন্ত্রে ভালো শোষিত না হওয়ায় আমাদের জন্য খুব একটা গুরুত্ব বহন করে না।

২) কোলেক্যালসিফেরোল ছাড়াও এটি ভিটামিন ডি৩ নামেও পরিচিত। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোলেক্যালসিফেরল, এক ধরণের ভিটামিন ডি যা সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে ত্বক তৈরি করে; এটি কিছু খাবারেও পাওয়া যায় এবং খাদ্য পরিপূরক হিসাবে নেওয়া যেতে পারে।

ভিটামিন ডি-এর প্রাণিজ উৎসগুলো কী কী?

  • সামুদ্রিক,তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত মাছ,
  • কলিজা,
  • ডিমের কুসুম,
  • ঘি,ছানা,মাখন, দই
  • মাশরুম
  • লিভার বা যকৃৎ

এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে।আবার কিছু খাবারে ফরটিফায়েড করে ভিটামিন ‘ডি’ বাড়ানো যায়। যেমন-কিছু সিরিয়ালস, ওটস, ফরটিফায়েড কমলার জুস, গরুর দুধ প্রভৃতি। আমাদের দেশে শিশুখাদ্যে ও টিনজাত গুঁড়া দুধে ভিটামিন ‘ডি’ যোগ করা হয়। আধা কাপ ফরটিফায়েড ওটসে ১২০ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’থাকে।

আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেন সঠিকভাবে কাজ করে তার জন্য সুষম খাবার খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তারপরেও শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সঠি কার্যকর রাখতে কিছু কিছু বাড়তি উপাদান ওষুধ হিসাবে খাবার প্রয়োজন হতে পারে। শুধুমাত্র খাবার থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া কঠিন। রক্তে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম এর মাত্রা ঠিক না থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ উচিত। সেই সাথে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খাওয়া এবং প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট রোদে হাঁটা।

শেষ কথা 

অতএব, আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ কম থাকলে বিভিন্ন রোগ যেমন টাইপ ১ ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, বিভিন্ন নিউরো রোগ, পেশিতে ব্যাথা, আলজাইমার্স ইত্যাদি হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। ১ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের গড়ে প্রতিদিন ৬০০ আইইউ এবং ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের ৮০০ আইইউ ভিটামিন ডি গ্রহণ করা দরকার। বর্তমানে কোভিড-১৯-এর মোকাবিলাতেও শরীরে সঠিক পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকা জরুরি।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url