রোজ সকালে হাঁটার ১০টি উপকারিতা

প্রতিদিন সকালে হাঁটার উপকারিতা

রোজ হাঁটার উপকারিতাঃ পৃথিবীতে সবচেয়ে সহজ এবং উপকারী ব্যায়াম হচ্ছে নিয়মিত হাঁটা। ছোট-বড় সকলেই আমরা এই নিয়মিত হাঁটার  অভ্যাসটি করতে পারি।হাঁটলে প্রাকৃতিকভাবে সুস্থতা ও প্রাণবন্ত অনুভূতি পাওয়া যায়।নিয়মিত হাঁটলে অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীর থেকে ক্ষয় হয় এবং হাঁটাহাঁটি করার ফলে আমাদের রক্তে ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল বাড়ে ও মন্দ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কমে। 

রোজ সকালে হাঁটার ১০টি উপকারিতা

দৈনন্দিন শারীরিক কার্যক্রম না হওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন অসুখ দেখা দেয় যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, আথ্র্রাইটিস, ওবেসিটি বা স্থুলতা, মাংসপেশির শক্তি কমে যাওয়া, অষ্ঠিওপোরোসিস বা হাড়ের ভঙ্গুরতা, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ইত্যাদি।

সুস্থ্য থাকার জন্য কতক্ষণ হাঁটা উচিত?

সুস্থ্য থাকার জন্য হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। হাঁটার উপকার পেতে হলে সপ্তাহে অন্তত চার বা পাঁচ দিন হাঁটতে হবে এবং প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিট হাঁটতে হবে। যদি প্রতিদিন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা হাঁটা যায় তবে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারসহ অসংখ্য রোগের ঝুঁকি ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করা যাবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটতে হবে। একবারে ৩০ মিনিট হাঁটতে না পারলে ১০ মিনিটের বিরতি নিতে পারেন। তবে ৩০ মিনিটের কম হাঁটা উচিত হবে না।

আরো পড়ুনঃ কিডনি ভাল রাখতে যেসব খাবার খাবেন। কিডনি ভাল রাখার সহজ উপায়।

কখন হাঁটবেন ও কোথায় হাঁটবেন?

হাঁটার উপযুক্ত সময় হলো ভোর বেলা। এসময় পরিবেশ শান্ত থাকে, কোলাহল কম থাকে এবং পরিবেশ তুলনামূলকভাবে কম দূষিত থাকে। বিকেলে পরিবেশ বেশি দূষণ থাকে কিন্তু সকালে কম দূষিত থাকে। তাই সকালে হাঁটাই উত্তম

হাঁটার স্থানটা হতে হবে সুন্দর, দূষণমুক্ত পরিবেশে। বাড়ির বাগান, পার্কে, পরিষ্কার ফুটপাতে বা যেকোনো খোলা জায়গায় হাঁটতে পারেন। হাঁটার জায়গা পরিবর্তন করে নিলে একঘেয়েমি কাঁটবে, ভালো লাগবে।

সকালে হাঁটার ১০ টি উপকারিতা 

প্রতিদিন ভোরে হাঁটার বেশ উপকারিতা রয়েছে। নিচে ১০ টি উপকারিতা উল্লেখ করা হলঃ

১) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকেঃ

বর্তমানে ডায়াবেটিস হচ্ছে বহুল পরিচিত একটি রোগ। যা অধিকাংশ মানুষেরি হয়ে থাকে। চেষ্টা করলেই এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।
গবেষণায় দেখা যায়, ৩০ মিনিটের হাঁটা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ইনসুলিন পরিচালনা করতে সাহায্য করে। হাঁটলে শরীরের পেশিতে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে রক্তের গ্লুকোজ কমে।

তাই, যারা ডায়াবেটিসের রোগী তাদের জন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকালে হাটার উপকারীতা অপরিসীম।

২। মাংসপেশি ও জয়েন্টের ব্যথা হ্রাস করেঃ

কিছু মানুষের জন্য সকালে বিছানা থেকে উঠা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ে বিশেষ করে যাদের মাংসপেশি রুষ্ট এবং জয়েন্টে ব্যথা আছে। সকালে হাঁটলে জয়েন্টের চারপাশের  মাংসপেশিকে তৈলাক্ত এবং দৃঢ়তা দ্বারা জয়েন্টকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। নিয়মিত হাঁটলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথার ঝুঁকি কমে যায়।

তাই মাংসপেশি এবং জয়েন্টের ব্যথা রয়েছে এমন ব্যাক্তিদের জন্য সকালে হাঁটা খুবই উপকারী  একটি ব্যায়াম।

৩) মেজাজ উন্নত করেঃ

সকালের প্রকৃতি এমনিতেই স্নিগ্ধ থাকে। এ সময় হাঁটার মজাই আলাদা। সকালে হাঁটা মানুষের মানসিক কর্মকাণ্ডের জন্যও উপকারী। যেমন-

  • শারীরিকভাবে ফিট রাখে।
  • মানসিক চাপ দূর করে।
  • দুশ্চিন্তা দূর করে।
  • ডিপ্রেশনের ঝুঁকি দূর করে।
  • মন প্রফুল্ল রাখে।
  • মানসিক অবসাদ দূর করে।
  • মন ভালো করে।

জরিপে অংশ নেওয়া ৮৩ ভাগ মানুষ জানিয়েছেন নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করলে মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এতে মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।

৪) ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করেঃ

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম হচ্ছে সকালে হাঁটা। ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন ৬০০ ক্যালরি পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ৬০ কেজি ওজনের ব্যাক্তি প্রতিদিন ঘণ্টায় ২ মাইল গতিতে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করলে, ৭৫ ক্যালরি শক্তি ক্ষয় করতে পারবেন।  আর যদি ঘণ্টায় ৩ মাইল গতিতে হাঁটেন তবে, ৯৯ ক্যালরি পুড়িয়ে ফেলতে পারবেন। এবং এটা শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করবে।

অতএব, আমরা খাবারের সাথে যে ক্যালোরি গ্রহণ করছি তার সমান বা বেশি যেন আমাদের শরীর থেকে ক্ষয় করতে পারি। এই কাজটি করতে উত্তম উপায় হলো হাঁটাহাঁটি করা।

আরো পড়ুনঃ কিটো ডায়েট কি? কিটো ডায়েট কিভাবে করবেন। ডা জাহাঙ্গীর কবির কিটো ডায়েট চার্ট

৫) ভালো ঘুম হতে সাহায্য করেঃ

মানসিক চাপ কারণে শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না ফলে ভালো ঘুম হয় না। হাঁটার অভ্যাস ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানোর কারণগুলি কমাতে সাহায্য করে। সকালের হাঁটা মনকে শান্ত রাখতে এবং শরীরে অধিক শক্তি সঞ্চার করতে সাহায্য করে। দিনের বেলা এটি সক্রিয় থাকতে সাহায্য করবে ফলে রাতের বেলা একটি ভালো ঘুম উপভোগ করা যায়।

তাই, যাদের রাতে ঘুমাতে সমস্যা হয় , তারা সকালের হাঁটা শুরু করা উচিত।

৬। ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করেঃ

সকালের হাঁটা আমাদের ফুসফুসের জন্য খুবই উপকারী। হাঁটার ফলে ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে পারে।কোনো কাজ করার সময় ফুসফুস শরীরে অক্সিজেন নিয়ে যায়, যা শরীরে শক্তি যোগায় এবং শরীর থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেরিয়ে যায়।

এছাড়াও, এটি শরীরের সকল ইন্দ্রিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ উন্নতি করতে সাহায্য করে।

৭) মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করেঃ

গবেষণায় দেখা গেছে. যে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।কেননা,সকালে প্রতিদিন হাঁটলে ফুসফুসে তাজা বাতাস প্রবেশ করে। আর এই বাতাস থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করে হৃৎপিণ্ড রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত মস্তিষ্কে সরবরাহ করে। ফলে মস্তিষ্ক সচল থাকে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। অতএব, সকালের হাঁটার উপকারিতা শুধু স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে না বরং এটি ভুলে যাওয়ার অভ্যাসকেও উন্নত করতে পারে।

৮) হার্টের জন্য খুবই উপকারীঃ

সকালের হাঁটা হার্টকে সুস্থ রাখতে খুবই কার্যকরী ভুমিকা পালন । নিয়মিত হাঁটার ফলে সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়। সেই সাথে  রক্তচাপও যেমন কমে, তেমনি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। হাঁটাহাঁটি করলে হাঁর্টের আরেকটি উপকার হয়। যেমন, হাঁর্টের পাম্পিং ক্ষমতা বেড়ে যায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে।

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটলে, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। এমনকি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে।  এবং হার্টের বিভিন্ন রোগ কমে যায়।

আরো পড়ুনঃ পাইলস কি? পাইলস এর লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা 

৯) স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করেঃ

নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করলে শতকরা ২৭ ভাগ পর্যন্ত উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা কমে যায়। ফলে হার্টের বিভিন্ন রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়। এমনকি নিয়মিত হাঁটা হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ্য ও শক্তিশালী রাখতে সহায়তা করে।অতএব, আমাদের সুস্থ থাকার জন্য হাঁটার কোনো বিকল্প নেই।

১০) মানসিক অবসাদ দূর করেঃ

প্রতিদিন হাঁটলে সকালের সুন্দর স্নিগ্ধতা উপভোগ যায়!  সকালের সুন্দর পরিবেশ ও কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি মনকে ভালো করে দেয়। এমনকি প্রতিদিন সকালে কিছুক্ষণ হাঁটার ফলে সারাদিন কাজের উৎসাহ বাড়ে এবং মানসিক চাপ কমে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে , যারা মানসিক চাপে ভোগছেন তারা যদি প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটেন, তাহলে তাদের অবস্থান অনেকটাই উন্নতি হতে পারে ।

শেষ কথা 

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আমাদের সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত হাঁটা একটি দুর্দান্ত উপায়। হাঁটার উপকারিতা অনেক। সকালে খালি পেটে হাঁটার উপকারিতা রযেছে, রাতে হাঁটার উপকারিতা,বিকালে হাঁটার উপকারিতা, ওজন কমাতে হাঁটার উপকারিতা, ভোর বেলা হাটার উপকারিতা, রোজ হাঁটার উপকারিতা রয়েছে । সকালে হাঁটার ফলে আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি-অবসাদ দূর হয়ে যায়। এমনকি নিয়মিত হাঁটার ফলে একাকিত্বের অনুভূতি থেকেও আমদেরকে  মুক্ত করে রাখে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করে নেয়া।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url