রোজায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার কার্যকরী উপায়


রোজায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার কার্যকরী উপায়


রোজায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার কার্যকরী উপায় 


  সিয়াম সাধনার মাস এই মাহে রমজান। বিশ্বের কোন দেশে  ১৬ ঘণ্টা, কোন দেশে ১৮ ঘণ্টা আবার কোন দেশে  ২১ ঘণ্টা পর্যন্ত রোজা পালন করা  হয়ে থাকে। রোজার সময় প্রায় খুব সাধারণ একটি প্রশ্ন  বেশি শোনা যায়। প্রশ্নটি  হলো রোজা রাখলে অ্যাসিডিটির কোন  সমস্যা হবে কিনা,  এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এমন ব্যাক্তি  রোগীর  রোজা রাখলে  কোন ধরনের  অসুবিধা হবে কিনা? এখানে দুটি বিষয় আমাদের খুব ভালো ভাবে বুজতে হবে।


প্রথমে হচ্ছে  গ্যাস্ট্রিক রোগের সম্পর্কে কিছু  প্রাথমিক একটা ধারণা দিচ্ছি। মানবদেহের পাকস্থলীতে প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দুই লিটার হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরিত হয়ে থাকে। যার কাজ হচ্ছে পাকস্থলীতে  শুধু মাত্র খাবার পরিপাক  করতে সহায়তা করা। যদি এর কোনও কারণে পাকস্থলীতে   হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরণ এর মাত্রা খুব  বেড়ে যায়, তাহলে পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ আবরণ তথা মিউকাস মেমব্রেনে প্রদাহ তৈরি হয়ে থাকে যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে থাকে  গ্যাসট্রাইটিস ।  এটি সাধারণত অতিরিক্ত খাবার খেলে অথবা  অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে কিংবা বেশি বেশি বেশি তেল জাতীয়  খাবার খেলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের মাত্রা  খুব বেড়ে যায় এবং প্রদাহ হয়ে থাকে,  যাকে আমরা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে থাকি।


গ্যাস্ট্রাইটিস এর উপসর্গ বা গ্যাসট্রিকের লক্ষণ


  • পেটের উপরি  ভাগে অর্থাৎ পেটের উপরের অংশে ব্যথা অনুভব হবে।
  • বুকে  জ্বালাপোড়া করবে।
  • খাবারের আগেও পরে পেটে ব্যথা হতে পারে।
  • খাবারের সময় বুকে বাঁধ পড়ার মত  অনুভব বা ব্যথা  হবে।
  •  অনেক সময় ঢেঁকুর আসবে।
  • বমি বমি ভাব হবে  এবং খাবারের চাহিদা প্রতি চাহিদা  কমে যাবে।
  • অল্প খাবার খেলে যেনো পেট ভরে গেছে এমন মনে  হবে।


এখন প্রশ্ন হলো একজন সুস্থ মানুষ রোজা রাখলে তার অ্যাসিডিটি হওয়ার কোন প্রকার  সমস্যা আছে কিনা।  এক কথায় আমরা যদি  উত্তর দেই তাহলে বলতে হবে  যে একজন সুস্থ মানুষ রোজা রাখলে তার অ্যাসিডিটি হওয়ার তেমন কোন প্রকার  সম্ভাবনা নেই ,  তবে যদি সে ইফতারি ও সেহরিতে নিচে দেওয়া নিয়মগুলো ভাল ভাবে  মেনে চলে।

  ইফতারির সময় যা করতে হবে। 


১। ইফতারিতে অতিরিক্ত তেল জাতীয়  খাবার অথবা তেলে ডুবিয়ে যেসব খাবার বানানো  হয় যেমন পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, পাকরা,  বুরিন্দা,  চিকেন ফ্রাই, জিলাপি  ইত্যাদি  যতটুকু সম্ভব পরিহার করতে হবে।


২। একসাথে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলা যাবে না।  এতে করে পেট  ভরা থাকে। ফলে পেটে  ব্যাথা অনুভব হয়ে থাকে। আমরা অনেকে ইফতারিতে বসে খেতে খেতে ইসোফেগাস তথা গলবিল পর্যন্ত খেয়ে ফেলি  তা কখনোই করা যাবে না।


৩। ইফতারে ইসুপগুলের শরবত, ডাবের পানি,   আরো অনেক প্রকার  সরবত ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।  আর শর্করা জাতীয় খাবার যথা খেজুর, পেয়ারা, ছোলা, ভুট , সেমাই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। 


৪। ইফতারি হতে হবে লাইট মিল অথবা অল্প পরিমানের  খাবার। এরপর  মাগরিবের নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে নেওয়াই  ভালো। বেশি ভাল হবে তারাবির নামাজের আগেই খেয়ে  নেওয়া । তাহলে খাবারের পরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে  তার পর নামাজ পড়তে গেলে নামাজের সময় এক ধরনের  ব্যায়াম হয়ে যাবে এবং সেটা খাবার পরিপাকের ক্ষেত্রে  অনেক বেশি সহায়ক। সেই সাথে  আমাদের অ্যাসিডিটি হওয়ার ঝুঁকি  ও কমে যাবে।


৫। অবশ্যই রমজান  মাসে অ্যাসিডিটি থেকে বাঁচার জন্য রাতে  কিংবা সাহরি উভয়ক্ষেত্রে শোয়ার ১.৩০ ঘন্টা আগে খাবার  খাওয়া শেষ করতে হবে এবং খেয়ে  কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে তারপর ঘুমাতে হবে। তাছাড়া  অ্যাসিডের ব্যাক ফ্লো হয়ে GERD এর মতো রোগ হতে পারে।


৬। টক জাতীয় ফল পরিমান মতো খেতে হবে। যেই ফলে  প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যেমন  টক জাতীয় ফলে সাইট্রিক অ্যাসিড  থাকে। তাই রোজার সময় টক ফল খুব  সাবধানতার সাথে খেতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় রাতের খাবার শেষ করে খেলে।


৭। টমেটো ইফতারির সময় অনেকের কাছে  প্রিয় খাবার। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক অ্যাসিড ও ম্যালিক অ্যাসিড থাকে এবং এটা পাকস্থলীতে ইরিটেশন করে। তাই  টমেটো বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো।


৮। ঝাল খাবার  আমাদের  পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই খাবারে  কাঁচা মরিচ কিংবা অতিরিক্ত ঝাল খাবার পরিহার করে চলতে হবে।


৯। গরম খাবার যথা চা, কফি, ইত্যাদি পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই রোজার সময় চা,  কফি ইত্যাদি অল্পই খাওয়া উচিত।



সেহরির সময় যা করণীয়


ফজর নামাজের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত সেহরি করা যায়। একটু  দেরিতে  হলেও সেহরি করার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। এতে করে  সেহরি শেষ করে,  ফজর নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া যায়। নামাজ শেষ হওয়ার   কিছুক্ষণ পর  হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। এর ফলে  খাবার পরিপাকে সহায়তা করে।  অনাথ যদি কেউ ফজরের সময় হওয়ার ১.৩০ -২ ঘন্টা আগে সেহরি করে তাহলে সে সাধারণত খাওয়া শেষ করে ২.৩০মিনিট বসে থাকে না। খাবার খাওয়ার সাথে  সাথে শুয়ে পরাই হলো অ্যাসিডিটির অন্যতম প্রধান  কারণ। 


সেহরি খাবারে ও এসকল   জিনিস পরিহার করা দরকার,  যা আমাদের অ্যাসিডিটি বাড়ায়। যেমন  চর্বিজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত তেলে  ও  তেলে ভাজা খাবার, চা কফি ইত্যাদি। 


এবার আলোচনায় আসি, যাদের  পরে ও আগে থেকেই অ্যাসিডিটি কিংবা গ্যাস্ট্রিকের  সমস্যা রয়েছে, তাদের  জন্য করণীয় কি কি? 


মূলত যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা অথবা  গ্যাস্ট্রিকের  রোগ রয়েছে, তারা গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খেতে পারেন  তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।  তারা রোজা রাখতে পারবেন।  আর সাথে সাথে উপরের যেসব  নিয়মগুলি দেওয়া আছে তা  মেনে চলতে হবে। গ্যাস্ট্রিকের বিভিন্ন  ধরনের ঔষধ আছে, তার মধ্যে অ্যান্টাসিড অথবা  ল্যান্সোপ্রাজল ক্যাপসুল খাওয়া যেতে পারে তাবে তা  চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে পারবেন।  অ্যান্টাসিড প্লাস সিরাপ সন্ধ্যায় খাবার খাওয়ার পরে খেতে হবে,। আর ল্যান্সোপ্রাজল ক্যাপসুল ভোর রাতে  খেলে ভালো  উপকার পাওয়া যায়। ল্যান্সোপ্রাজল এর কার্যকারিতা অনেক সময় থাকে।


ওষুধ  নেওয়ার পরেও যদি কারো রোজা রাখতে বেশি কষ্ট হয় ,  যদি  রোগির প্রচণ্ড বুকে ব্যথা ওঠে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে রোজা ভঙ্গ করার অবকাশ রয়েছে। 


ধন্যবাদ

____________________

tag:এসিডিটি দূর করার উপায়,পেটের পীড়া দূর করার উপায়,গ্যাস্ট্রিক এর ব্যাথা দূর করার উপায়,গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা দূর করার উপায়,গ্যাস্ট্রিক আলসার দূর করার উপায়,গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ,গ্যাস দূর করার ঘরোয়া উপায়,গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির উপায়,গ্যাস্ট্রিক এর ব্যাথা  কোথায় হয়,গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়,গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ,গ্যাসের ব্যথা কমানোর উপায়,গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ কি,গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ ও প্রতিকার,গ্যাস্ট্রিক এর দোয়া,গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির উপায়,গ্যাসের ব্যাথা দূর করার উপাায়




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url